ত্বকের যত্ন নিতে গাজরের ১০ টি উপকারিতা ও গাজরের ফেসপ্যাক

গাজর একটি মূল জাতীয় খাবার । এটি সবার কাছে সমাদৃত। সালাত তৈরী, সবজি রান্না কিংবা কাঁচা খাওয়া সব রকমভাবে গাজরকে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত গাজর অনেক রংয়ের হয়ে থাকলেও আমারা বেশীরভাগ সময় লাল ও কমলা রংয়ের গাজরকেই চিনে থাকি। খাবার হিসেবে গাজরের জনপ্রিয়তা থাকলেও ত্বকের জন্য এটি খুবই গুরুতপূর্ণ ভূমিকা রাখে । ত্বকের জন্য গাজরের উপকারিতা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না । 

গাজরের মধ্যে বিটা – কেরোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ  সহ নানা উপাদান  রয়েছে । এসকল  উপাদান আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে নানান ভাবে কাজ করে। আমি আপনাদের সাথে গাজরের সেরা ১০টি উপকারিতা ও গাজরের ফেসপ্যাক শেয়ার করব, যার মাধ্যমে আপনারা ত্বককে উজ্জ্বল,ফর্সা ও দীপ্তময় করে তুলতে পারবেন। 

চলুন গাজরের উপকারিতা ও গাজরের ফেসপ্যাকগুলো সম্পর্কে জেনে নিই। 

গাজরের উপকারিতা ও গাজরের ফেসপ্যাকঃ                

১. ত্বককে উজ্জ্বল করেঃ 

উজ্জ্বল, সুন্দর ও ফর্সা ত্বক আমরা সকলেই চাই ।  আর সেটা যদি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া পাওয়া যায় তাহলে তো কোন কথাই নেই । অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। গাজরের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট যা ত্বকের কালো রংকে দূর করবে ও রোদে পুড়া ত্বককে গভীর হতে চিকিৎসা করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলবে। 

গাজরের মাধ্যমে ত্বককে উজ্জ্বল করার জন্য নিচের ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ 

গাজরের পেষ্ট – ২ টেবিল চামচ 

মধু                – ১ টেবিল চামচ 

ভিটামিন ই      –  ১টি 

ফেসপ্যাক তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

প্রথমে গাজর টুকরো করে কেটে ব্লান্ডার অথবা ভেজিটেবল গ্রান্ডার দিয়ে গাজরের পেষ্ট তৈরী করে নিন।

এরপর উপাদান তিনটিকে একসাথে নিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন।  ব্রাশের সাহায্যে প্যাকটি মুখে লাগান । তবে খেয়াল রাখবেন প্যাক যেন ঠোঁটে ও চোখে না লাগে।

এবার প্যাকটি লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

২০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।

নোটঃ 

১) ভাল ফলাফলের জন্য

সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করুন।

২.মুখের তৈল নিয়ন্ত্রণ করেঃ 

ত্বকে অতিরিক্ত তৈলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভিটামিন সি এর ভূমিকা অনেক । গাজরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি এর প্রাচুর্যতা । ভিটামিন সি ত্বক হতে অতিরিক্ত তৈল শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে তৈল মুক্ত রাখে। এছাড়াও এটি ত্বকে কোলাজেন বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। 

ত্বকের অতিরিক্ত তৈল নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজরের এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করুণ। 

ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

গাজরে পেষ্ট – ২ টেবিল চামচ

লেবুর রস –  ২ টেবিল চামচ

মুলতানি মাটি – ১ টেবিল চামচ 

ফেসপ্যাক তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ 

প্রথমে গাজর টুকরো করে কেটে ব্লান্ডার অথবা ভেজিটেবল গ্রান্ডার দিয়ে গাজরের পেষ্ট তৈরী করে নিন।  এরপর একটি পরিস্কার কাঁচের বাটিতে সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে নরম পেষ্ট তৈরী করুন। মুখ পরিস্কার করে ঠোঁট ও চোখ ব্যতিত সারা মুখে প্যাকটি লাগান। 

প্যাক লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন । 

১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন । 

নোটঃ                  

১) প্যাকটি শুধু মাত্র তৈলাক্ত ও ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য উপযুক্ত। অন্যান্য ত্বকের অধিকারীরা ব্যবহার করতে চাইলে প্যাকটিতে লেবুর রসের পরিবর্তে গোলাপ জল ব্যবহার করুন।

২) ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুণ। 

৩. ত্বকে ইনফেকশন ও ইনপ্লেমেশনের চিকিৎসা করেঃ

গাজরের অন্যতম একটি উপকারিতা হল এটি ত্বককে যে কোন ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে । গাজরের মধ্যে বিটা – কেরোটিন ( Beta – Carotene ) নামক একটি উপাদান রয়েছে । আর ত্বকে যদি কোন ইনফেকশন হয় তাহলে গাজরের মধ্যে থাকা এই বিটা – কেরোটিন ত্বককে সেই ইনফেকশন হতে রক্ষা করে আর ত্বকের যে কোন ক্ষত সারিয়ে তুলে। 

ত্বকে যদি কোন জ্বালার সৃষ্টি হয় গাজরের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো সেই জ্বালাকে কমিয়ে ত্বককে শান্তা করে তুলে । এছাড়াও ত্বকের মধ্যে অসুস্থ্য সেলকে খুব দ্রুত সুস্থ্য করতে গাজরের কোন জুড়ি নেই। এটি অসুস্থ্য সেলকে দ্রুত আরোগ্যতা দান করে ইনফেকশন ও ইনপ্লেমেশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহায়তা করে। 

৪. সূর্যের রশ্মী হতে রক্ষা করেঃ   

আমাদের ত্বক সূর্যের আলোতে এলে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাবে আমাদের ত্বকে নানান ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয় । গাজরের মধ্যে আছে মেলানিন ( Melanin ) নামক পদার্থ যা সান বার্ন ( Sun burn ), সান ডেমেজ ( Sun damage ) এবং সান ডিজিজ ( Sun disease ) হতে ত্বককে রক্ষা করার জন্য ত্বকের মধ্যে একটি রক্ষাকারী আবরণ তৈরী করে । 

তবে, এক্ষেত্রে গাজর ত্বকে ব্যবহার করার চেয়ে প্রতিদিন গাজর বা গাজরের রস খেলে বেশী উপকার পাবেন।    

৫.পক্কতা – বিরুধী ক্ষমতাঃ 

গাজরের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ ও সি এর সমন্বয়ে তৈরি হয় অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট প্যাকড্‌ । যা ত্বকে ফ্রি -রেডিকেলসের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বককে রেডিয়েশনের হাত থেকে রক্ষা করে। ফ্রি- রেডিকেলস ত্বকে বয়সের প্রক্রিয়া শুরু করে ও ত্বককে বয়সী করে তুলে । এছাড়াও ত্বকে বলিরেখা , বয়সের ছাপ ও অসমান রং ত্বককে বয়সী করে দেখানোর দায়ী। গাজরের অ্যান্টি– অক্সিডেন্ট ত্বক হতে এসকল সমস্যা দূর করে দেয় । এছাড়াও গাজরের ভিটামিন সি ত্বকে কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়তার পাশাপাশি ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।      

৬. ফুঁসকুড়ি ও ব্রণের চিকিৎসা করেঃ

অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট শুধুমাত্র পক্কতা- বিরুধী কাজ করে না এটি ত্বকের সমস্যার সমাধানও দিয়ে থাকে। ফুঁসকুড়ি ও ব্রণ সহ ত্বকের মধ্যে যে সমস্যা দেখা দিতে পারে গাজরের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো সে সকল সমস্যার চিকিৎসা করে থাকে।  

এসকল সমস্যা থেকে সহজে নিস্তার পাবার জন্য নিচের ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন । 

ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ 

গাজরের রস – ১  টেবিল চামচ 

বেসন – ১ টেবিল চামচ

লেবুর রস – ১/২ টেবিল চামচ

ফেসপ্যাক তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ 

প্রথমে গাজরকে ব্লান্ড করে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে গাজরের রস বের করে নিন। এবার সব গুলো উপাদান একসাথে নিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে প্যাক তৈরী করে নিন।  এবার ব্রাশের সাহায্যে এটি পুরু মুখে লাগান। তবে ঠোঁট ও চোখে লাগাবেন না । প্যাক লাগানোর পর ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন ।  ২৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। 

নোটঃ

১) সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার

করুন। এতে ভাল ফলাফল পাবেন । 

২) ঘাড়ে কাল দাগ থাকলে তা দূর করার জন্য এই প্যাকটি ঘাড়েও লাগাতে পারেন ।

৭. ত্বকের দাগ দূর করেঃ

আমাদের ত্বকে ব্রণের

দাগ , রোদে পুড়া কাল দাগ সহ নানাণ ধরণের দাগ দেখা যায়।গাজর ত্বক হতে এসকল দাগকে

দূর করে দিয়ে ত্বককে দাগহীন করে। 

৮. ত্বককে ময়শ্চারাইজ করেঃ 

ত্বককে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ত্বকের উপরে একটি রক্ষাকারী আবরণ তৈরী করাই হল ময়শ্চারাইজ করা । ত্বকের সুস্থ্যতার জন্য ত্বককে ময়শ্চারাইজ করা খুব জরুরী । গাজর ত্বককে খুব ভালভাবে ময়শ্চারাইজ করে থাকে। তবে ত্বককে ময়শ্চারাইজ করার জন্য গাজরের সাথে আরো কিছু উপাদান যোগ করলে এর ফলাফল খুব দ্রুত হয় । 

ত্বক ময়শ্চারাইজ করার জন্য নিচের সব উপাদান এক সাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। 

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

১ টেবিল চামচ – গাজরের পেষ্ট

Aloe Vera Gel 

১ চা চামচ   – এলোভেরা জেল 

১ চা চামচ – মিল্ক ক্রিম

১/২ চা চামচ – ক্যাসটর অয়েল ।

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ 

প্রথমে একটি গাজরকে ব্লান্ড করে পেষ্ট তৈরী করে নিন।

এবার একটি পরিস্কার বাটিতে সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে মিশিয়ে নরম পেষ্ট তৈরী করে নিন। মুখ পরিস্কার করে ঠোঁট ও চোখ ব্যবিত প্যাকটি সারা মুখে লাগান ।

প্যাকটি লাগিয়ে  ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

নোটঃ

১) ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

৯. শুষ্ক ত্বকের শুষ্কতা দূর করেঃ

শুষ্ক ত্বকের জন্য ভিটামিন এ খুব উপকারী । ভিটামিন এ শুষ্ক ত্বককে জলয়োজন (Hydrated )করে ত্বকের শুষ্কতা দূর করে । গাজরের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ  শুষ্ক ত্বক হতে রুক্ষতাকে দূর করে ত্বককে মসৃণ ও কোমল করে তুলে ।  

১০.ফেসিয়াল স্প্রে হিসেবে ব্যবহারঃ  

গাজরের স্প্রে আমাদের ত্বকের জন্য খুব ভাল কাজ করে । এটি আমাদের ত্বকের পক্কতাকে প্রতিরোধ করে ত্বককে নরম ও ইয়াং করে তুলে। তাই, এটি ত্বকে ফেসিয়াল স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করলেও খুব ভাল উপকার পাওয়া যায়। 

গাজরের ফেসিয়াল স্প্রে তৈরী করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

গাজরের রস–  ৪ চামচ

গোলাপ জল – ২ চামচ

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ 

প্রথমে একটি গাজর নিয়ে এটি টুকরো টুকরো করে কেটে ব্লান্ড করে নিই ।

এরপর ছাকনি দিয়ে ছেঁকে গাজরের রস বের করে নিন। 

এবার একটি স্প্রে বোতল নিয়ে এতে গাজরের রস ও গোলাপ জল নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। আপনারা চাইলে অনুপাত

ঠিক রেখে উপাদান বাড়িয়ে নিতে পারেন।

এবার আপনি ত্বকে এটি স্প্রে করুন ও ত্বকে শুকিয়ে যেথে দিন।

নোটঃ

 ১) ত্বককে সুস্থ্য ও সুন্দর রখতে এটি প্রতিদিন ব্যবহার

করতে পারেন ।

 ২) স্প্রেটি চাইলে পুরু শরীরে ব্যবহার করতে

পারবেন । 

তো বন্ধুরা , সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ত্বকের জন্য গাজরের উপকারিতার কথা আমাদের জানা হয়ে গেল । তাহলে, আজ থেকে নিজের সৌন্দর্য রুটিনে গাজরের জায়গা করে দিন । বন্ধুরা , গাজরের উপকারিতার কথা তো আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । আপনারাও কি কি উপকার পেয়েছেন তা অবশ্যই কমেন্ট করে আমার সাথে শেয়ার করবেন।