কলার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার উপকারিতা

স্বাস্থ্য-রক্ষায়-কলার-উপকারিতা

আমাদের শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য আমাদের সবসময় সতর্ক থাকা উচিত। খাদ্য অভ্যাসেও সচেতন থাকতে হবে সবাইকে । তাহলেই আমাদের শরীর সুস্থ্য থাকবে । আমরা যদি আমাদের প্রতিদিনের খাবারের রুটিনে কলা রাখতে পারি তাহলে এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারি হবে। কলার মধ্যে অনেক উপকারি গুণ রয়েছে যেগুলো  স্বাস্থ্য রক্ষায় চরমভাবে ভূমিকা রাখে। বন্ধুরা, আজকে আমি আপনাদের সাথে স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার কিছু  উপকারিতা শেয়ার করব যে উপকারিতা গুলো জানার পর আপনারা আপনাদের প্রতিদিনের খাবারের রুটিনে কলা রাখতে বাধ্য হবেন। চলুন স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার উপকারিতা কি তা জেনে নিই।

১.হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে কলার পুষ্টিগুণঃ

আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশের একটি হল হার্ট । হার্টকে সুস্থ্য রাখা অত্যন্ত জরুরী । একটি সুস্থ্য হার্ট আমাদেরকে দীর্ঘ সুস্থ্য জীবন দিতে পারে । এক গবেষণায় দেখা গেছে হার্টকে সুস্থ্য রাখতে পটাসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং শরীরে পর্যাপ্ত পটাসিয়ামের অভাব দেখা দিলে হৃদস্পন্দন বাধাগ্রস্থ হয়। এছাড়াও হার্টের সংকোচন – প্রসারণ অনেকাংশে পটাসিয়ামের উপর নির্ভর করে । শরীরে পটাসিয়ামের  লেভেল কমে গেলে হার্ট  স্পন্দন খুব দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করে  ( বুক ধুক্‌ধুক্‌ করা ) যা হাইপোকেলেমিয়া ( hypokalemia ) নামে পরিচিত । তাই হার্ট বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে আমাদের শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা প্রয়োজন । কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম । একজন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন একটি করে কলা খায় তাহলে তার শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে এবং হার্ট এ্যাটাকের মত বেদনাদায়ক রোগের তিন ভাগের একভাগ ঝুঁকি কমে যাবে। আর দুইভাগ ঝুঁকি নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই । আপনি যদি একটি সুস্থ্য ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করেন ও নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাহলে আপনার বাকি হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যাবে ।

কলার যত উপকারিতা

তাই আর দেরি না করে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে আজ থেকে প্রতিদিন কলা খাওয়া শুরু করে দিন,না হলে যেকোন দিন যে কোন মুহূর্তে আপনার হার্ট পটাসিয়ামের অভাবে বন্ধ হয়ে যেথে পারে ।

২. বুকের জ্বালা ( অম্লরোগ ) কমিয়ে আনতে কলার উপকারিতাঃ

আমাদের অনেকের সাধারণ সমস্যা হল বুকের জ্বালা । বুকের জ্বালা পুড়া করাকে অম্লরোগ বা এসিডিটি ( acidity ) বলে । এই এসিডিটির কারণে সময়ে অসময়ে যখন তখন আমাদের বুকে জ্বালা করে। আমাদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে এটি হয়ে থাকে । আপনারা যারা নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করতে পারেন না তারা এসিডিটির মত বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য  প্রতিদিন একটি করে কলা খেতে পারেন ।   

কলার উপকারিতা

কলাকে বলা হয় প্রাকৃতিক অম্লনাশক ঔষধ ( অ্যান্টাসিড ) । আমরা যদি প্রতিদিন একটি করে কলা খায় তাহলে আমাদের অম্লরোগ অর্থাৎ বুকের জ্বালা পুড়া কমে আসবে । প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস হার্টের ঝুঁকি কমিয়ে আনার পাশাপাশি বুকের জ্বালা কমিয়ে প্রশান্তি প্রদান করে।

৩. উচ্চ রক্ত কমাতে কলার ভূমিকাঃ

আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পটাসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম যা শরীরের উচ্চরক্তচাপের ভারসাম্য অবস্থা বজায় রাখে । আপনারা হয়ত অনেকে ভাবতে পারেন কলার মধ্যে তো সোডিয়াম রয়েছে যা শরীরে পানি ধরে রেখে রক্ত চাপ বাড়ায়…? আপনাদের জন্য বলছি , কলার মধ্যে খুব কম পরিমাণেই সোডিয়াম রয়েছে ।  যেমনঃ- একটি মাঝারি আকারের কলার মধ্যে যেখানে ১.২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে যেখানে ৪২২ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে ।

কলার উপকারিতা

এই পটাসিয়াম শরীরে কিডনি কার্যক্রমকে উন্নত করে যা শরীর থেকে সোডিয়ামকে বাইরে বের করে দেয় । তাই বলা যায় ,পটাসিয়াম শরীরে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার প্রক্রিয়াকে কমিয়ে এনে রক্তনালীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিথিল করে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে এনে সঠিক ও পর্যাপ্ত  রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে । 

৪. হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার পুষ্টিগুণ যেভাবে সহায়তা করেঃ

আমাদের শরীরকে সুস্থ্য ও কর্মঠ রাখার জন্য প্রয়োজন হাড়ের সুস্থ্যতা । কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়ামের শরীরের অনেকগুলো কাজের মধ্যে অন্যতম আরেকটি কাজ হল শরীরে হাড়ের সুস্থ্যতার জন্য গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ।  এছাড়াও কলার মধ্যে রয়েছে সিলিকন ও ম্যাগানিজ , এ উপাদান গুলোও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে । বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে কলার মধ্যে ক্যালসিয়াম না থাকার পরও কলা হাড়কে সুস্থ্য রাখতে  এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয়রোধ ও বয়সী মহিলাদের বুন ডেনসিটির মত রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে অসাধারণ কার্যকর ভূমিকা রাখে পটাসিয়াম ।

স্বাস্থ্যের জন্য কলা

এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে পটাসিয়াম গ্রহণের ফলে অস্টিওপরোসিসের  (Osteoporosis) মত রোগের ঝুঁকি কমে যায় । তাই বলা যায় ,পটাসিয়াম হাড়কে শক্ত ও সুস্থ্য রাখার জন্য হাড়ের মধ্যে যে ক্যালসিয়াম রয়েছে তার মাত্রা বজায় রাখে ও হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে।

৫. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কলার ভূমিকাঃ

অন্যান্য সকল বিষয়ের মত আমাদের শরীর সুস্থ্য , রোগমুক্ত , কর্মঠ ও শক্তিশালী থাকার অন্যতম শর্ত হলো শরীরের হজম শক্তি ঠিক থাকা । আমাদের হজম ক্রিয়া যদি বাধা-গ্রস্ত হয় তাহলে আমাদের শরীরে নানান ধরণের রোগের সৃষ্টি হয় ।

স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার উপকারিতা

প্রতিদিন কলা খাওয়ার আরেকটি উপকারিতা হল কলা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । কারণ কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম ক্রিয়ায় সাহায্য করে হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরাণিত করে।

৬.নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করেঃ

কলার মধ্যে থাকা উপাদান গুলোর ভিতর আরো রয়েছে ভিটামিন বি৬। বিটামিন বি৬ শরীরে নতুন কোষ জন্মাতে সহায়তা করে।

৭. রক্তশূণ্যতার চিকিৎসা করেঃ

আমাদের শরীরে রক্তের অভাব দেখা দিলে তাকে রক্তশূন্যতা (Anemia ) বলে থাকি । এই রক্তশূন্যতা দেখা দিলে বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ,মা ও গর্ভের বাচ্চা্র জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে ।

মায়েদের জন্য কলার উপকারিতা

এই অবস্থায় রক্তশূন্যতার চিকিৎসা করার জন্য আমাদের প্রয়োজন ফলিক এসিড (Folic acid ) । ফলিক এসিড রক্তশূন্যতা পূরণে একটি আদর্শ হিসেবে কাজ করে । ফলিক এসিডের মত নিউট্রেন খুব সহজে খোঁজে পাওয়া যায় খাদ্যের ভিটামিন বি থেকে । আর কলা এ চাহিদা পূরণে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে ।যখন একজন মায়ের গর্ভে ভ্রূণ বেড়ে ওঠে তখন ফলিক এসিড রক্তশূণ্যতা প্রতিরোধ করে ভ্রূণের স্বাস্থ্যকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে ।  

বন্ধুরা , আপনারা তো কলার পুষ্টিগুণ ও কলার উপকারিতাগুলো জেনে নিলেন । এবার থেকে নিশ্চ্যয় আপনারা খাদ্য তালিকায় কলা রাখতে ভুল করবেন না?