তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের যত্নে কফির সেরা তিনটি ফেসপ্যাক

কফি আবিস্কারের পর থেকে সুস্বাদু পাণীয় হিসেবে পরিচিত ও ব্যবহৃত হয়ে আসলেও উজ্জ্বল,ফর্সা ত্বকের জন্য কফির বিকল্প নেই বললেই চলে। কফির সাহায্যে তৈরি প্যাকগুলো সব ধরনের ত্বকের জন্য মানানসই বলেই এর জনপ্রিয়তা রয়েছে সবার কাছে। তাই তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বক নিয়ে যারা খুব দুশ্চিন্তায় আছেন আজকে আমি তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য সব থেকে সেরা তিনটি কফির ফেসপ্যাক শেয়ার করব।

এই প্যাকগুলো ত্বক হতে ব্রণ ও ব্রণের দাগ সহ সবধরনের দাগকে দূর করবে এবং তার সাথে সাথে ত্বকের কালচে ভাব দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করবে। ত্বককে ফ্রেশ ও মসৃণ রাখার জন্য যারা তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের অধিকারি তারা নিজেদের ত্বকের যত্ন নেবার জন্য এই ফেসপ্যাকগুলো ব্যবহার  করতে পারেন ।     

কফির উপকারিতাঃ

কফির মধ্যে থাকা আন্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কালো ও রোদে পুড়া দাগকে দূর করে দিয়ে ত্বককে ফর্সা করে তুলতে পারে নিমিশেই।

কফি ত্বক হতে অনমনীয়তা দূর করে দিয়ে ত্বককে নমনীয়  ও টানটান করে তুলে।এছাড়াও কফি ত্বক হতে বলিরেখা ,ফাইন লাইনসের মত সমস্যাকে দূর করে দেয় । তো বন্ধুরা, কফির উপকারিতা জানার পর আপনারা অনায়াসে ত্বকে কফির ব্যবহার করতে পারেন।

কফির সেরা ৩টি ফেইসপ্যাক 

১. চিনি,বেসন ও কফির ফেইসপ্যাকঃ  

এই ফেইসপ্যাকটি ত্বক হতে অতিরিক্ত তৈল শোষণ করে নিবে এবং এটি ত্বকের ভারসাম্য বজায় রেখে ত্বক হতে ব্রণকে দূর করে দিয়ে ত্বককে উজ্জ্বলতা দান করবে। এছাড়াও প্যাকটিতে আছে বয়স-বিরোধী উপাদান যা ত্বক হতে বয়সের চাপ কমিয়ে ত্বককে সুস্থ্য ও তরুণ (young)করে তুলবে। এই ফেইসপ্যাকটির কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করার জন্য এর তৈরী ও ব্যবহার প্রক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করেছি। 

ভাগ-১: স্ক্রাবিং (scrubbing) 

স্ক্রাবার তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদনঃ 

  • কফি পাউডার – ১ চামচ
  • চিনি              -১ চামচ  
  • জলপাই তৈল (olive oil)- ১ চামচ

 স্ক্রাবার তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

ধাপঃ

১.একটি পরিস্কার বাটিতে  কফি পাউডার, চিনি ও জলপাই তৈল (olive oil) নিয়ে সবগুলো উপাদান একসাথে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন।

২.সবগুলো উপাদান মিশে গেলে তৈরী হয়ে যাবে স্ক্রাবার (scrubber)। স্ক্রাবার নিয়ে মুখের মধ্যে আস্তে আস্তে আলতু করে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন । এতে করে আপনার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে ও ত্বক সুস্থ্য হয়ে ওঠবে ।

৩. স্ক্রাব করার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন । 

ভাগ-২: ফেসপ্যাক 

ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

  • কফি পাউডার -১ চামচ
  • বেসন             – ১ চামচ
  •  দই                -৩ চামচ

ফেসপ্যাক তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

ধাপঃ

১.একাটি পরিস্কার বাটিতে কফি পাউডার,বেসন ও দই সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।

২.ব্রাশ বা তুলার প্যাডের সাহায্যে প্যাকটি সারা মুখে লাগান । তবে ঠোঁটে ও চোখে লাগাবেন না। প্যাকটি লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন ।

৩.১০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে পরিস্কার টাওয়াল বা সুতির কাপড় ভিজিয়ে নিন। এরপর ভিজা টাওয়াল বা সুতির কাপড় থেকে অতিরিক্ত পানি চেপে ফেলে দিয়ে প্যাকটি মুছে তুলে নিন।

কেন কাজ করবেঃ

চিনিঃ

স্ক্রাবিয়ের রাজা হিসেবে সুপরিচিত চিনির মধ্যে আছে গ্লাইকোলিক এসিড । গ্লাইকোলিক এসিডের অন্যতম ক্ষমতা হল ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে

ত্বককে উজ্জ্বলতা প্রদান করা।

জলপাই তৈলঃ

Olive oil

জলপাই তৈল ত্বকে ময়শ্চারাইজার প্রতিনিধি হিসেবে করায় এটি ত্বককে খুব ভালভাবে ময়শ্চারাইজ করে । জলপাই তৈলে আরো আছে পক্কতা বিরুধী

ক্ষমতা, যা ত্বকে বয়সের চাপ পড়তে দেয় না এবং ত্বক সুস্থ্য ও সুন্দর করে তুলে ।

বেসনঃ

বেসনের মধ্যে থাকা প্রোটিন,আয়রন ,জিংক ভিটামিন এ, ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তৈল শোষণ করে ত্বককে ভিতর থেকে

পরিস্কার করে ত্বকে আরো বেশি উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে। 

দইঃ

দইয়ের মধ্যে থাকা ল্যাকটিক এসিড ত্বক হতে মৃত কোষ সরিয়ে ত্বককে ফর্সা করে তুলে। এছাড়াও ভিটামিন বি-৫ ত্বক হতে কালো দাগ,বয়সের চাপ ও

ব্রণের দাগ দূর করে দিয়ে ত্বককে দাগমুক্ত করে তুলে।     

নোটঃ

১)সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।

২)কুসুম গরম পানি ব্যবহার করার সময় খেয়াল রাখবেন

পানি যেন বেশি গরম না হয়। পানি বেশী গরম হলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে তাই ব্যবহারের আগে হাত দিয়ে পানি পরিক্ষা করে নিবেন।

৩) চাইলে যে কোন উপাদান বাড়িয়ে নিতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে উপাদানের অনুপাত ঠিক রাখতে হবে।

২.দুধ,চালের গুড়া ও কফির ফেসপ্যাকঃ

এই ফেইসপ্যাকটি আপনাকে সুন্দর করে তুলার পাশাপাশি ত্বকের সমস্ত রকম ব্রণ, ব্রণের দাগ, রোদে পুড়া কালো দাগ দূর করে দিয়ে আপনাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে ।

 ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

  • কফি পাউডার -১ চামচ
  • চালের গুড়া     – ১ চামচ
  • কাঁচা তরল দুধ –  ৪ চামচ

ফেসপ্যাক কিভাবে তৈরী ও ব্যবহার করবেনঃ

ধাপঃ 

১.একটি পরিস্কার বাটিতে সবগুলো উপাদান নিয়ে একসাথে খুব ভাল করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন।

২.প্যাক তৈরি হয়ে এলে ব্রাশ বা তুলার প্যাডের সাহায্যে চোখ ও ঠোঁট ছাড়া সারা মুখে লাগান।প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত

অপেক্ষা করুন।

৩.১৫ মিনিট পর মুখ ৩ মিনিট মত হালকা ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

কিভাবে কাজ করবেঃ

কাঁচা তরল দুধঃ

দুধের মধ্যে থাকা ল্যাকটিক এসিড কালো রোধে পুড়া দাগকে দূর করে ত্বককে ভিতর থেকে ফর্সা করে তুলে ।

চালের গুড়াঃ

এটি ত্বক হতে বয়সের চাপকে দূর করে দিয়ে ত্বককে ফ্রেশ, দ্বীপ্তময় ও তরুণ করে তুলে।

নোটঃ 

১)সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

৩.মধু, লেবু ও কফির ফেসপ্যাকঃ

অতিরিক্ত তৈল শোষণ করে তৈলাক্ত ত্বকের তৈল চিটচিটে ভাব দূর করে ত্বককে কোমল নমনীয় ও ময়শ্চারাইজ করতে এই প্যাকটির তুলনা নেই। ত্বকে জীবাণুর আক্রমণ ও সংক্রমণের বিরুদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করে তুলতে এই প্যাকটি ব্যবহার করে দেখুন। এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করে অবশ্যই আশার চেয়ে ভাল ফলাফল পাবেন । 

ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ 

  • কফি পাউডার  – ১চামচ
  • Honey
  • মধু                – ১ চামচ
  • লেবুর রস      – ১ চামচ

ফেসপ্যাক কিভাবে তৈরী ও ব্যবহার করবেনঃ

ধাপঃ

১. প্রথমে একটি পরিস্কার বাটি নিন। এর মধ্যে কফি পাউডার,মধু ও লেবুর রস নিয়ে খুব ভাল করে উপাদান গুলো মিশিয়ে নিন।উপাদান গুলো মিশে গেলে ব্যবহারের জন্য প্যাক তৈরি হয়ে যাবে।

২.মুখ পরিস্কার করে নিয়ে ব্রাশ বা তুলার প্যাডের সাহায্যে প্যাকটি মুখে লাগান। তবে খেয়াল রাখবেন চোখ ও ঠোঁটে যেন না লাগে। প্যাকটি মুখ লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।

৩.১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কাজ করার কারণঃ

মধুঃ 

Honey

মধুকে বলা হয় প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। মধু ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে নমনীয়তা ,উজ্জ্বলতা ও কোমলতা দান করতে প্রচন্ড পারদর্শী। মধুর মধ্যে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এমন ভাবে কাজ করে যাতে ত্বক হতে কালচে ভাব দূর হয়ে যেতে বাধ্য হয় । এছাড়াও মধুর মধ্যে থাকা অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বককে ব্রণ সৃষ্টিকারী জীবাণু ও অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

লেবুর রসঃ 

লেবু প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে সুপরিচিত। লেবুর ব্লিচিং এজেন্ট ত্বককে ফর্সা করে। লেবুতে আরো আছে সাইট্রিক এসিড (citric Acid)  ও ভিটামিন সি, এসকল উপাদান ত্বক হতে অতিরিক্ত তৈল ময়লা মুছে তৈলাক্ততা থেকে মুক্তি দিয়ে ত্বককে অতিমাত্রায় ফর্সা  ও উজ্জ্বল করে তুলে।

নোটঃ

১)ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

২)শুস্ক, সেনসেটিভ ও স্বাভাবিক ত্বকের বন্ধুরা

ব্যবহার করতে চাইলে প্যাকটিতে লেবুর রস ব্যবহার করবেন না। তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের বন্ধুরা ত্বকের যত্ন নেবার জন্য এখান থেকে যে কোন একটি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারবেন ।