ত্বকের জন্য কলার উপকারিতা ও কলার ফেসপ্যাক 

কলার উপকারিতা জানা থাক বা না থাক সারা বিশ্বে সবার কাছে  জনপ্রিয় ফল হিসিবে সমাদৃত ফলের মধ্যে ব্যাপকভাবে জায়গা দখল করে রেখেছে যে ফলটি, তার নাম কি জানতে চান? তার নাম হল কলা ।কলা এমন একটি ফল যেটি ছোট বড় সবার কাছে সমানে জনপ্রিয়। এবার না হয় গেল মুখরোচক খাবার হিসেবে কলার জনপ্রিয়তার কথা কিন্তু সৌন্দর্য্য প্রেমীদের কাছে এর কদর কতটা তা অনেকের অজানা । আজ আমি আমার লেখনিতে জানিয়ে দিব রূপচর্চায় কলার ভূমিকা কতটা অপরিহার্য। সৌন্দর্য্যের  কথা বলতে বলতে স্বাস্থ্য রক্ষায় ও শরীরের বিভিন্ন দিকের সুস্থ্যতা বজায় রাখতে কলার অসাধারণ ক্ষমতার কথা তো বলাই হয়ে ওঠেনি আপনাদের। শরীরের নানা সমস্যার সমাধান দিয়ে স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখায় কলার পারদর্শীতা রয়েছে ব্যাপকহারে। 

ত্বকের যত্নে কলা 

তবে আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার কলাতে ত্বকের জন্য কি কি উপকারিতা রয়েছে।

 কলার উপকারিতা ও কলার ফেসপ্যাকঃ

১. ত্বক দাগমুক্ত ও ফর্সা করেঃ

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের প্রথম এবং প্রধান কাজ হল ত্বকের কালো দাগ, কালচে ভাব, রোদে পুড়া দাগ দূর করে দিয়ে ত্বককে দাগমুক্ত করে ভিতর থেকে ফর্সা করে তুলা । 

আর কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বক হতে কালো ও রোদে পুড়া দাগকে দূর করে দিয়ে ত্বককে দাগমুক্ত ও ফর্সা করে তুলে । 

ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা করার জন্য নিচের ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

২ চামচ  – কলার পেষ্ট

১ চামচ  – দুধ 

১ চামচ  – গোলাপ জল  

১ চামচ  – লেবুর রস 

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

প্রথমে কলাকে টুকরো টুকরো করে ব্লান্ডারে দিয়ে ব্লান্ড করে নিন।

একটি পরিস্কার কাচেঁর বাটিতে সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন। 

 তুলা বা সুতির কাপড় পানিতে ভিজিয়ে ত্বক মুছে নিন।

 এবার ব্রাশের সাহায্যে প্যাকটি সারা মুখে ব্যবহার লাগান। তবে সচেতন থাকবেন ঠোঁট ও চোখে যেন প্যাক না লাগান। এবার প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। 

২০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

নোটঃ

১) ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তহে ৩ বার ব্যবহার করুন।

২) ব্লান্ডার না থাকলে হাত দিয়েও কলা নরম করে পেষ্ট তৈরী করে নিতে পারেন।তবে ব্লান্ডার দিয়ে ব্লান্ড করলে উপকার পাবেন বেশী।

৩) আপনাদের যাদের ত্বকে সমস্যা ও এলার্জি আছে তারা প্যাকটিতে লেবুর রস ব্যবহার করবেন না ।

২. ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখেঃ

ত্বককে শুধু ফর্সা করলেই কি চলবে ? আমাদের ত্বক ফর্সা হওয়ার পরও আবার যত্নের অভাবে ত্বক মলিন হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের প্রয়োজন নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া । কলার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি । ভিটামিন সি ত্বকের প্রাকৃতিক তারুণ্য উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। ফর্সাজ্জ্বোল ত্বক পাওয়ার জন্য এই ফেইসপ্যাক গুলো ব্যবহার করতে পারেন।

প্যাকঃ ১ 

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

১ টেবিল চামচ  – কলার পেষ্ট 

 ১ টেবিল চামচ – টক দই  

১ টেবিল চামচ – অ্যালোভেরা জেল 

১ টেবিল চামচ – মধু ও 

১ টেবিল চামচ – লেবুর রস 

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

 প্রথমে একটি পাঁকা কলা নিয়ে এটাকে ব্লান্ড করে নিন ।

 এরপর একটি পরিস্কার কাচেঁর বাটিতে সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে প্যাক তৈরী করুন।

 মুখ পরিস্কার করে প্যাকটি মুখে লাগান ও ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন ।

 ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

নোটঃ  

১) সর্বাধিক ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। 

২) ব্লান্ডার না থাকলে হাত দিয়ে পেষ্ট তৈরী করতে পারেন। সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন কোন প্রকার শক্ত দলা যেন না থাকে।

৩) চেষ্টা করবেন বাজারের অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার না করে বাড়িতে তৈরী করে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে।

প্যাকঃ২ 

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ

৪ টেবিল চামচ – কলার পেষ্ট 

২ টেবিল চামচ – লেবুর রস 

 তৈরী ও ব্যবহারঃ 

থমে একটি পাকা কলা ব্লান্ড করে নিন। 

এরপর কলার পেষ্ট ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে  নরম পেষ্ট তৈরী করে মুখে লাগান ।

 ১৫ মিনিট পর ঠান্ড আপানি দইয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন । 

প্যাকঃ৩

আমি আগেও আপনাদের  জানিয়েছি সুন্দর ত্বক পাও্যার জন্য আমাদের নিয়মিত রূপচর্চা প্রয়োজন । আপনি চাইলে প্রতিদিন খুব অল্প সময়ের মধ্যে রূপচর্চা করতে পারেন কলার ফেইসওয়াশ দিয়ে ( Daily banana face wash ) । আমরা সকলেই সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে নিজেদের মুখ পরিস্কার করে থাকি । এই কর্মব্যস্ত জীবনে যাদের নিজেদের রূপচর্চা করার জন্য হাতে অতিরিক্ত সময় নেই তাদের জন্য এই ফেইসওয়াশটি খুব ফলদায়ক হবে । একদিকে এটি আপনার সময় বাচাঁবে অন্যদিকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে খুব সহজে ত্বকের যত্ন নিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে । 

কলার ফেইসওয়াশটি তৈরী করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানঃ 

১ টি পাকা কলা পেষ্ট  

২ টেবিল চামচ কাঁচা তরল দুধ ।

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ 

 প্রথমে একটি পাকা কলা নিয়ে ব্লান্ড করে বাটিতে নিন। এরপর এর মধ্যে দুধ দিয়ে ভাল করে মিদশিয়ে নিলেই তৈরী হয়ে যাবে কলার ফেইসওয়াশ ।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ৫-১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন । ম্যাসাজের পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন । 

৩.ব্রণ ও ফুঁসকুড়ি দূর করেঃ

আমরা সকলে কম বেশী ব্রণের যন্ত্রণায় অতিষ্ট থাকি । এই যন্ত্রণা থেকে যত সহজে যত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবততই  আমাদের জন্য ভাল । প্রাকৃতিকভাবে

ব্রণের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত পেতে খুব দ্রুত কার্যকর ভাবে সহায়তা করে কলা । কলার ভিতরের নরম অংশ ত্বকের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি কলার চামড়াও খব বেশী ফলদায়ক । কলার চামড়া ব্যবহারে ত্বকের সমস্ত রকমের ব্রণ । ফুঁসকুড়ি সহ মুখে ওঠা ছোট ছোট বিচি সব কিছু দূর হবে ।  কলার মধ্যে রয়েছে লেকটিন ও অ্যান্টি – ব্যাকটেরিয়াল প্রোপারটি যা ত্বকে ব্রণ সৃষ্টিকারী জীবাণু ও অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করে । কলার চামড়া মাধ্যমে কিভাবে  ব্রণ ও ফুঁসকুড়ি দূর করবেন তা ভাবছেন নিশ্চয়……..! চিন্তা করার কিছু নেই ,ব্রণ ও ফুঁসকুড়ি দূর করার জন্য কলার চামড়া কিভাবে ব্যবহার করবেন তা জানিয়ে দিচ্ছি । 

প্রথমে একটি পাকা কলার চামড়া ( কখনো কাঁচা কলার চামড়া নিবেন না ) নিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটুন । এবার কলার চামড়ার ভিতরের অংশ প্রভাবিত ( যে জায়গায় ব্রণ ও ফঁসকুড়ি রয়েছে ) এলাকায় ৭-১০ মিনিট মত ম্যাসাজ করুন । ম্যাসাজের পের আরো ৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা  পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন । 

নোটঃ

১) ভাল ফলাফলের জন্য প্রতিদিন ব্যবহার করুন যত দিন না আপনার ত্বক হতে ব্রণ ও ফঁসকুড়ি চলে যায়। 

২)কলার মজ্জা অর্থাৎ ভিতরের অংশ দিয়ে ত্বক হতে ব্রণ , ব্রণের দাগ ও ফুঁসকুড়ি দূর করার জন্য কলার এই প্যাকটি  ব্যবহার করতে পারেন । 

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ 

১টি কলার পেষ্ট 

১ টেবিল চামচ – দুধ 

১/২ টেবিল চামচ – ওঠমিল ও 

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে প্যাক তৈরী করুন।

মুখ পরিস্কার করে প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন ।

২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। 

নোটঃ 

 ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তহে ২ বার ব্যবহার করুন । 

প্যাক চোখে ও ঠোঁটে লাগাবেন না । 

 4.ত্বককে ময়শ্চারাইজ করেঃ

ত্বককে রক্ষা করার জন্য ত্বকের উপরে একটি রক্ষাকারী আবরণ তৈরী করে ত্বককে নরম ও কোমল রাখার প্রক্রিয়াকে ময়শ্চারাইজ বলে । কলার মধ্যে রয়েছে পটাসিয়াম , ভিটামিন ই । এ সকল উপাদান গুলো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে পরিস্কার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে নরম ও কোমল করে তুলে ।কলাকে গভীর

( Deep) ময়শ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বকের জন্য খুবই উপকার পাওয়া যায়। 

৫. অতিরিক্ত তৈল নিয়ন্ত্রণ করেঃ 

ত্বকের গ্রন্থি

সমূহের নিঃসরিত রসের ফলে আমাদের ত্বক তৈলতৈলে হয়ে ওঠে । ত্বকের তৈল নিয়ন্ত্রণ করতে ভিটামিন সি এর জুড়ি নেই । কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের অতিরিক্ত তৈল মুছে দিয়ে ত্বকের তৈল নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে রাখে তৈলমুক্ত ,ফ্রেশ ও পরিস্কার ।এছাড়াও ভিটামিন সি ত্বকে কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । 

আপনাদের সাথে কলার একটি প্যাক শেয়ার করছি । এই প্যাকটি মত্র ১৫ মিনিটে ত্বক হতে সমস্ত তৈল দূর করে দিবে।

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ 

২ টেবিল চামচ – কলার পেষ্ট 

১ টেবিল চামচ – লেবুর রস 

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

প্রথমে কলাকে ব্লান্ড করে নরম পেষ্ট তৈরী করে নিন। 

এরপর কলার পেষ্টের মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান ও ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।

 ১৫ মিনিট পর ত্বক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

নোটঃ 

কার্যকর প্রভাবের জন্য সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করুন।

৬. ত্বককে নরম করে তুলেঃ

কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ময়শ্চারাইজিং প্রোপারটি যা ত্বকের ফাটা প্রতিরোধ করে ত্বককে নরম ও কোমল করে তুলে।

৭. ত্বকে বয়সের চাপ বৃদ্ধিকে ধীর করেঃ

ত্বকে বয়স ও বয়েসের চাপ বৃদ্ধির জন্য  দায়ী ফ্রি-রেডিকেলস ।  অর্থাৎ ফ্রি-রেডিকেলস ত্বকেবয়স বৃদ্ধির প্রকৃয়াকে শুরু করে থাকে।আর কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটমিন ই। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন ই  ত্বকে ফ্রি –রেডিকেলসের জন্য ব্লক তৈরী করে ত্বকে বয়সের চাপ পড়ার প্রকৃয়াকে ধীর করে। এছাড়াও এটি ত্বক হতে

বলিরেখাকে মুছে দিয়ে ত্বককে তরুণ করে তুলতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই ত্বককে ইউ ভি রশ্মির ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে।

 ৮. চোখের ফোলা কমায়ঃ 

 কলার মধ্যে যে পটাসিয়াম আর নিউট্রেন্ট রয়েছে তা আমাদার সকলের জানা। পটাসিয়াম আর নিউট্রেন্ট চোখের নিচের রক্ত চলাচলকে শান্ত করে চোখের ফোলা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।  চোখের ফোলা কমানোর জন্য একটি কলাকে হাত দিয়ে ভর্তা করে ফোলা জায়গায় লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । 

৯. ত্বককে এক্সফুলিয়েট করেঃ

 কলার সাহায্যে ত্বকে স্ক্রাবের ফলে ত্বককেব এক্সফুলিয়েট করতে পারবেন। আর কলা অ্যান্টি – আক্সিডেন্টে ভরপুর হওয়ায় ও স্ক্রাবের ফলে ত্বক হতে মৃত কোষ ওঠে যায় এবং ত্বকে নতুন কোষের জন্ম হয়। 

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ 

 অর্ধেক ( Half ) – পাকা কলা 

১ টেবিল চামচ – চিনি  

তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ

হাত দিয়ে কলাকে নরম করে নিন ও এর মধ্যে চিনি দিয়ে উপাদান দুইটিকে মিশিয়ে নিন।  

এটি ত্বকে সার্কোলার মুশনে ম্যাসাজ করুন ৫ মিনিট। 

 ৫ মিনিট পর  ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।  

চিনির মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলিক এসিড যা ত্বক হতে মৃত কোষ সরিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা প্রদান করে।

আমরা যেমন নিজেদের  স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলাকে রাখি ঠিক তেমনি ভাবে ঘরে নিজেই নিজের ত্বককে পরিস্কার , ফ্রেশ , দাগ্মুক্ত ও সুন্দর করতে কলার ব্যবহার শুরু করতে পারি ।