হৃদপিণ্ড সম্পূর্ণ শরীরে রক্ত সরবরাহের কাজ করে থাকে। করোনারি আর্টারি নামে হৃদপিন্ডের গাঁয়ে ছোট দুটি ধমনী আছে।
“এই করোনারি আর্টারিতে কোলেস্টেরল জমে ধমনীর রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টির ফলে হূদযন্ত্রে রক্তস্বল্পতা জনিত কারণে অক্সিজেনের ব্যাঘাত ঘটে,যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। “
প্রতি মিনিটে স্পন্দন এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ড সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করে, এই যন্ত্রের কাজ বাধাগ্রস্ত হলে, সেটা সারা দেহের জন্য বিপদ ডেকে আনে।হার্ট অ্যাটাকে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূতি হয় এবং এই ব্যথা মোটামুটিভাবে ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী হাসপাতালে পৌঁছার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে ফেলে।হার্ট অ্যাটাকের সময় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। আবার অনেক সময় রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করেন এবং সেটা কিছু সময় পরে ছেড়েও যেতে পারে।
এখন আমরা দেখব হার্ট অ্যাটাক কাদের বেশি হতে পারে এবং এর কারণটা কি?
কিছু বিষয় আছে যেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়না। আবার কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাধারণত যে সকল কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে………
- হার্ট অ্যাটাক সব বয়সে একরকম হয় না। সাধারণত মধ্য বয়সে কিংবা বৃদ্ধ বয়সে এই রোগে বেশি হতে পারে।
- সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অনেক বেশি এ রোগটি হয়ে থাকে।
- বংশে কারো হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আর একটু বেড়ে যায়।
- ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদির কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ যাদের রয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আরো বেশি।
- শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে মুটিয়ে যাওয়া, স্থুলতা, হার্ট অ্যাটাকের আরও একটি কারণ।
- অধিকহারে চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে এবং শাকসবজি জাতীয় খাবার কম খেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অশান্তির ফলে ও হার্ট অ্যাটাক হয়।
- সর্বশেষে যে কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল বা অন্য কোন হরমোন নিয়ন্ত্রণ কারি ওষুধ সেবন করলে আমাদের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো কি কি?
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো হলো………
- হার্ট অ্যাটাক হলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
- শ্বাস নিতে কষ্ট হবে।
- বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে যেতে পারে।
- বুকে মারাত্মক বা তীব্র ব্যাথা হবে। বুকে চাপ অনুভব হবে। যন্ত্রণা হবে কিংবা ভারি ভারি লাগবে।
- শরীরে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হতে পারে।
- খাবার হজমে সমস্যা হবে এবং পেটের উপরের অংশে জ্বালাপোড়া করতে থাকবে।
- চোখে ঝাপসা দেখবে। অন্ধকার দেখবে।
- হার্ট আক্রান্ত হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
এখন আমাদের কি করা উচিত যদি কোন ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাক করে
হার্ট অ্যাটাকের জন্য আমাদের করনীয় কি………
- হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
- এরকম ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বে কিংবা নেওয়ার মধ্যবর্তী রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
- রোগীর জিব্বার নিচে একটা নাইট্রেট ট্যাবলেট দিতে হবে।
- এছাড়া হাতের কাছে যদি অক্সিজেন থাকে তাহলে তো সব চেয়ে ভাল।
- হাসপাতাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে হৃদরোগের চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত হাসপাতাল উত্তম হবে। হাসপাতালে ভর্তি করে হূদরোগ বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধানে ধারাবাহিক চিকিৎসা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসা শুরু করবেন। চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে রোগীর ইসিজি করাতে পারেন। অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাও দিতে পারেন।
- প্রথমে এনজিওগ্রাম করে ব্লক এর পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। যদি ব্লক বেশি হয় এবং ওষুধের সমাধান হবে না বলে মনে হয়, তবে এনজিওপ্লাস্টি করতে হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সার্জন ছোট হয়ে যাওয়া ধমনীতে প্রয়োজন অনুসারে কয়েকটি মাইক্রো রিং পরিয়ে দেবেন। এরপর আবার হার্ট অ্যাটাক হলে চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে ওপেন হার্ট সার্জারি বা বাইপাস সার্জারি করাতে পারেন। এক্ষেত্রে সার্জন পা থেকে একটি শিরা কেটে দিয়ে ধমনীর সমস্যাযুক্ত অংশ দিয়ে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহের একটি বাইপাস রাস্তা তৈরি করে দিতে পারেন।
বন্ধুরা আপনাদের হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে হয়ত কিছু ধারণা আমি দিতে পেরেছি।