সভ্যতার প্রথম উম্মেষের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের রূপচর্চার ইতিহাস । ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে খৃষ্টপূর্ব ১০ হাজার বছর পূর্বে মেসোলিথিক যুগে গুহাবাসী মানুষদের ভিতর রূপচর্চার প্রচলন ছিল বলে ধারণা করা হয়। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত নিজেকে আরেকটু সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলার প্রচেষ্টা থেমে নেই আজো। বরং সভ্যতার বিবর্তনে বর্তমান বিশ্বে এর প্রচেষ্টায় প্রতিযোগীতা,প্রতিদ্বন্দী অনেকে।
যুগের বিবর্তনে সভ্যতায় পরিবর্তন আসলেও রূপচর্চার জন্য প্রকৃতির অপার দান প্রাকৃতিক বস্তুর মাধ্যমে রূপচর্চায় পরিবর্তন আসেনি এখনো। এই রকম একটি প্রাকৃতিক দান হল হলুদ। ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশে বিয়ের আগে গায়ে হলুদ মাখার অনুষ্টান করা হয় যার নাম “গায়ে হলুদ”। ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করার জন্য হলুদ শুধু মুখে নয় পুরু শরীরে এর ব্যবহার করা হয়।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে হলুদের কিছু ফেসপ্যাক ও ফেসমাস্ক। যেগুলো ত্বকে ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন।
হলুদের উপকারিতাঃ
বিভিন্ন কারণে ত্বক নিজের সৌন্দর্য্য হারিয়ে রং তামাটে ও বিবর্ণ হয়ে যায়।(যেমনঃ- অতিরিক্ত রোদে বের হওয়া ,ধূলা বালি,অতিরিক্ত মেকআপ ইত্যাদি)হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কালো ও রোদে পুড়া দাগ দূর করে ত্বককে ভিতর থেকে ফর্সা করে তুলে।
হলুদের অ্যান্টি – ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বক হতে ব্রণ সৃষ্টিকারী জীবাণু ও অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করে ত্বককে ব্রণমুক্ত ও জীবাণু মুক্ত রাখে।
তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য ফেসমাস্ক ও ফেসপ্যাকঃ
এখন যে ফেসমাস্ক ও ফেসপ্যাক আপনাদের সাথে শেয়ার করব এই ফেসমাস্ক ও ফেসপ্যাক তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তৈল শোষণ করে নিয়ে তৈল চিটচিটে ভাব দূর করে ব্রণকে ও অন্যান্য জীবাণুকে তাড়িয়ে দিবে। এছাড়াও এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে রংকে ভিতর থেকে ফর্সা করে বিধায় আপনি পাবেন স্থায়ীভাবে উজ্জ্বল ও ফর্সা ত্বক।
১.জেলেটিন পাউডার ও হলুদের ফেসমাস্কঃ
ফেসমাস্ক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
- কাঁচা হলুদের পেষ্ট – ১ চা চামচ
- জেলেটিন পাউডার- ১/২ চা চামচ
- টক দই – ৩ চা চামচ
- লেবুর রস – ১ চা চামচ
ফেসমাস্কটি কিভাবে তৈরী ও ব্যবহার করবেনঃ
ধাপঃ
১.কাঁচা হলুদের পেষ্ট,জেলেটিন পাউডার , টক দই ও লেবুর রস একটি পরিস্কার বাটিতে নিন ।
২. উপাদানগুলো খুব ভাল করে মিশিয়ে নরম পেষ্ট তৈরী করে নিন।তবে খেয়াল রাখবেন পেষ্টে যন কোন প্রকার দলা না থাকে।
৩. এবার মিশ্রণটি ঠোঁট ও চোখ ব্যতিত সারা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪. ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে হালকা করে ঘষে ঘষে প্যাকটি তুলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কাজ করার কারণঃ
টক দইঃ
টক দয়ের মধ্যে থাকা ল্যাকটিক এসিড মৃত কোষ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে । এছাড়াও দয়ের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া ব্রণসৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে ও ব্রণের দাগ দূর করে।
জেলেটিন পাউডারঃ
জেলেটিন পাউডারের উপাদানগুলো ত্বকে নমনীয়তা বৃদ্ধি করে ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তুলবে।এটি ত্বকের ব্লাক হেডস দূর করে ও ত্বককে টানটান করে তুলে।
লেবুর রসঃ
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লেবুর রস খুব উপাকারী উপাদান। লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও সাইট্রিক এসিড ত্বকের অতিরিক্ত তৈল শোষণ করে নিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করে তুলতে খুবই কার্যকরী।
নোটঃ
১) কার্যকরী ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
২) কাঁচা হলুদ না থাকলে হলুদ গুড়া ব্যবহার করবেন।
২.মুলতানি মাটি,শষা ও হলুদের ফেসপ্যাকঃ
প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
- হলুদ গুড়া – ১ চামচ
- মুলতানি মাটি – ২ চামচ
- শষার রস – ১ চামচ
- মধু – ১ চামচ
প্যাকটি কিভাবে তৈরী ও ব্যবহার করবেনঃ
ধাপঃ
১)একটি পরিস্কার কাচেঁর বাটিতে সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে প্যাক তৈরী করুন।
২)পরিস্কার পানিতে মুখ ধুয়ে নিয়ে মুখে পানি না থাকে মত টিস্যু অথবা সুতির কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিন।
৩) এবার তৈরী করা প্যাকটি ঠোঁট ও চোখ ব্যতিত সম্পূর্ণ মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪)১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কাজ করার কারণঃ
মুলতানি মাটিঃ
অ্যালুমিনিয়াম সিলিক্ট ও ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড দিয়ে মুলতানি মাটি গঠিত। যেটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তৈল শোষণ করে নেয়।এছাড়াও এটি ত্বকের মৃতকোষ সরিয়ে ক্লান্ত ত্বককে উজ্জিবিত করে ও কালোদাগ দূর করে ত্বককে ভিতর থেকে ফর্সা করে তুলবে।
শষার রসঃ
শষাতে আছে বায়ুটিন (biotin),ভিটামিন এ,বি১ এবং সি। এই উপাদানগুলো ত্বকে অতিরিক্ত তৈল নিয়ন্ত্রন করে ও রোদে পুড়া ত্বকের চিকিৎসা করে থাকে।
মধুঃ
প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করা মধু ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সহায়তা করে।মধু ব্রণ সৃষ্টিকারী জীবাণু,বলিরেখা,কালচেভাব দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রেখে ত্বককে নরম ও আকর্ষণীয় করে তুলে।
নোটঃ
১) সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করুন।
শুষ্ক,স্বাভাবিক ও সেনসেটিভ ত্বকের জন্য ফেসপ্যাকঃ
এই ফেসপ্যাকগুলো শুষ্ক,স্বাভাবিক ও সেনসেটিভ ত্বকের জন্য চমকপ্রদ কাজ দিবে। এই ফেসপ্যাক গুলো শুষ্কতা ও রুক্ষতা দূর করে দিয়ে ত্বকের অতিরিক্ত কোচকে যাওয়াকে নিরাময় করে ত্বককে নরম,উজ্জ্বল ও মসৃণ করার পাশাপাশি তরুণ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
৩.মিল্ক ক্রিম,মধু ও হলুদের ফেসপ্যাকঃ
প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
- কাঁচা হলুদের পেষ্ট – ২ চা চামচ
- মিল্ক ক্রিম(দুধের ছানা) – ২ চা চামচ
- মধু – ২ চা চামচ
প্যাকটি কিভাবে তৈরী ও ব্যবহার করবেনঃ
ধাপঃ
১)একটি পরিস্কার কাচেঁর বাটিতে কাঁচা হলুদের পেষ্ট (না থাকলে হলুদ গুড়া ব্যবহার করতে পারবেন), মিল্ক ক্রিম(দুধের ছানা) ও মধু একসাথে নিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে প্যাক তৈরী করুন।
২)পরিস্কার পানিতে মুখ ধুয়ে নিয়ে টিস্যু অথবা সুতির কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিন। খেয়াল রাখবেন প্যাক লাগানোর আগে মুখে যেন পানি না থাকে।
৩) এবার তৈরী করা প্যাকটি ব্রাশ বা তুলার প্যাডের সাহায্যে মুখে লাগান। প্যাকটি চোখে ও ঠোঁটে লাগাবেন না ।প্যাকটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪)১৫ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কাজ করার কারণঃ
মিল্ক ক্রিমঃ
মিল্ক ক্রিমের মধ্যে আছে প্রোটিন, ফ্যাট ভিটামিন ও অল্প পরিমানে মিনারেলস যা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে মৃতকোষ ,বলিরেখা ও রুক্ষতা দূর করে দিয়ে গভীরভাবে ময়শ্চারাইজ ও পরিস্কার করে ।আর এর পাশাপাশি মিল্ক ক্রিম ত্বককে নরম,উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে প্রশংসার দাবি রাখে।
মধুঃ
মধুর মধ্যে আছে প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজিং ক্ষমতা। এটি ত্বককে গভীর থেকে ময়শ্চারাইজ করে বিধায় শুষ্ক ত্বকের রুক্ষতা দূর হয়ে ত্বক নরম ,উজ্জ্বল ও দীপ্তময় হয়ে ওঠে।
নোটঃ
১) ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন
বন্ধুরা, আপনারা আপনাদের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ফেসপ্যাক ও ফেসমাস্ক ব্যবহার করুণ।