আমাদের দেশে সুপারি চিনে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ প্রাচীনকাল থেকে দাদু ঠাকুমার পাশে অন্য কিছু থাক না থাক, সুপারি কাটার যাঁতি কিন্তু অবশ্যই দেখা যায়।
সেই থেকে এই পর্যন্ত এখনো সুপারি খাওয়ার জনপ্রিয়তা একইভাবে রয়ে গেছে। বর্তমানে সুপারি খাওয়া আরো দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইংরেজিতে বিটল নামে এই সুপারি, বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই উৎপাদন হচ্ছে।
আজকে আমি আপনাদের জানাব, সুপারি খেলে আমাদের কি কি উপকার হয়ে থাকে। তার পাশাপাশি আরও জানাবো সুপারি খেলে আমাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা………
সুপারি কি?
সুপারি আমাদের দেশে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। বর্তমানে দেশে অনেক অঞ্চলে বেকার যুবকরা সুপারি বাগান করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতেছে। সেই সাথে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
সুপারি গাছ দেখতে নারিকেল গাছের মতো লম্বা। সুপারিতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকার কারণে এটি কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে বিশেষজ্ঞরা। কারণ এটি বেশি খেলে মাথা গরম হয়ে যায়।
সুপারি খাওয়ার উপকারিতাঃ
আমাদের দেশে বিশেষ করে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে সুপারির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান সমাজে যারা একটু বয়স্ক ধরনের হয়ে গেছে তাদের পান সুপারি খুবই জনপ্রিয় খাবার। হিন্দু রীতিতে পূজা-অর্চনার দিন এই পান সুপারি সুন্দর করে সাজাতে দেখা যায়। লক্ষ্মী পুজোর দিনে পান সুপারি প্রবণতা বেশি দেখা যায়, কারন মা লক্ষ্মীর খুবই প্রিয় একটা খাবার পান সুপারি।
সুপারি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করেঃ
সুপারির মধ্যে বিভিন্ন ধরণের কার্যকরী ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা আমাদেরকে স্ট্রোকের ঝুঁকি হতে রক্ষা করে। বন্ধুরা, আপনারা অনেকেই না জেনে সুপারি খেয়ে থাকেন, কিন্তু সুপারিতে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের রক্তে রক্ত চলাচলের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিয়ে স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে।
সিজোফ্রেনিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসাবে সুপারির উপকারিতাঃ
সুপারির মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি আমাদেরকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করে। তাই যারা সিজোফ্রেনিয়া বা মানসিক ব্যধিতে আক্রান্ত, আপনারা সুপারি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এটি খাওয়ার কারণে আমাদের মানসিক যে অশান্তি থাকে সেটা অনেকাংশেই দূর হয়ে যায়।
দাঁতের ক্ষয় থেকে বাঁচতে সুপারির উপকারিতাঃ
সুপারিতে থাকা অ্যান্থেলিমিন্টিক এফেক্টস (পরজীবী ধ্বংসকারী) উপাদানটি আমাদের দাঁতকে বিভিন্ন ক্ষয় হওয়া থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে। অনেকেই মনে করেন সুপারি খেলে দাঁতের ক্ষয় হয়। কথাটা কিন্তু সত্যি আপনি যদি অনেক বেশি পরিমাণে সুপারী খান,তাহলে আপনার দাঁতের ক্ষয় হবে। কিন্তু অল্প পরিমাণ সুপারি খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার দাঁতের ফিলামেন্ট ঠিক রাখতে পারবেন।
বমির ভাব কমাতে সুপারি খাওয়ার উপকারিতাঃ
বিশেষ করে গর্ভ অবস্থায় অনেক মহিলারা বমির সমস্যায় ভোগেন। এ সময় আপনারা যদি সুপারি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন, তাহলে আপনাদের বমি হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।
পাশাপাশি যারা প্রতিদিন অল্প পরিমাণ সুপারি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন, তাদের খাওয়ার রুচি বাড়বে এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন……
ঠোটে ফুসকা পরা,
খাবারে অরুচি,
খাবার হজম না হওয়া এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
তাহলে বন্ধুরা, এতদিন আমরা যারা সুপারি খাওয়ার উপকারিতা না জেনে সুপারি খেয়ে আসছিলাম, আশা করি আমার আজকের এই প্রতিবেদনটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা সুপারি খাওয়ার উপকারিতা গুলো বুঝতে পেরেছেন।
সতর্কতাঃ
প্রত্যেকটা জিনিসেরই ভালো দিক এবং খারাপ দিক আছে। সুপারি খাওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকমই। অতিরিক্ত সুপারি খাওয়া আপনার জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।
তাই সঠিক নিয়মে সুপারি খেয়ে আপনি আপনার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ।