ঠিক যেন কমলার মতো দেখতে গোলাকার একটি ফল যাকে আমরা মালটা নামে অনেকে চিনে থাকি। কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন মালটার আসলে নিজস্ব গোত্র বলতে কিছুই নেই।
এটি জাম্বুরা এবং কমলার সংকরায়ন এর মাধ্যমে উৎপন্ন একটি ফল। যদিও বা মালটা আমাদের দেশে কম উৎপাদন হয়, এটি বেশির ভাগই আসে বিদেশ থেকে।
মাল্টার উৎপাদনকারী অঞ্চল সমূহঃ
মালটার স্থানীয় উৎপাদন খুবই কম। এটি প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকায় বেশি পরিমাণে জন্মে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রাজিল, আমেরিকা, কানাডা, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, চীনপ্রভৃতি দেশে মালটার উৎপাদন দেখা যায়।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালটার উৎপাদন লক্ষণীয় হারে বাড়তেছে। যেমন দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিং,মৌলভীবাজার, নর্সিংদি, কুমিল্লা।
মাল্টার উপকারিতাঃ
সচরাচর মালটাকে আমরা ফ্রুট হিসেবে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু এটি আমাদের স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে অনেক উন্নত মানের একটি ফল। যে কারণে আমরা যেকোনো রোগীকে দেখতে যাওয়ার সময় এই ফল সাথে নিয়ে যায়।
কারণ সাইট্রাস জাতীয় এ ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মাল্টার পুষ্টিগুণঃ
টক ও মিষ্টির সমন্বয়ে এই ফলটি দিনদিন জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে যাচ্ছে। সারা বছর এই ফলের চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারি কারণ বাজারের এর সহজলভ্য মূল্যের কারণে। ধনী-গরিব সবাই আমরা এই ফলের স্বাদ নিতে পারি।
কারণ এটি বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। মাল্টার মধ্যে ভিটামিন সি ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আর প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও ভিটামিন রয়েছে।
এছাড়াও মালটার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। যা এই ফল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা পূরণ করতে পারি।
যার মধ্যে বিটা ক্যারোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন, অ্যাসকরবিক এসিড, ফোলেট এ পলিকুইননের মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে।
মালটা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়ঃ
যাদের হজমের সমস্যা আছে বা যারা খুব সহজে মল ত্যাগ করতে পারে না তাদের প্রতিদিন খাবারের তালিকায় মাল্টার জুস রাখা প্রয়োজন।
কারণ এর মধ্যে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের হজমক্রিয়া ভালোভাবে হতে সহায়তা করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মাল্টার উপকারিতাঃ
মালটা রসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা আমাদের শরীরে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে।
ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের খাবারের তালিকায় মালটা রাখতে পারেন। এতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় এটি আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মাল্টার উপকারিতাঃ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য অবশ্যই আমাদের রক্তনালী পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন আছে। কিন্তু রক্তের মধ্যে যদি কোলেস্টরলের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে আমাদের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
ফলে উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা দেখা যায়। এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে আমরা আমাদের খাবারের তালিকায় নিয়মিত মালটা যোগ করতে পারি। কারণ এর মধ্যে ধাকা এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে।
হাড় এবং দাঁতের কাঠিন্যতা বজায় রাখতে মাল্টার উপকারিতাঃ
মাল্টার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস ও আয়রন থাকার কারণে এটি আমাদের হাড় এবং দাঁতের কাঠিন্যতা মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে।
তাই যাদের হার্ট ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে বা দাঁতের মাড়ি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তারা নিয়মিত মালটা খেতে পারেন।
এছাড়াও মালটা গর্ভবতী থাকা অবস্থায় খাওয়া দরকার। গর্ভবতী থাকা অবস্থায় শরীরে ক্যালসিয়াম আয়রন ও রক্তশূন্যতা জনিত সমস্যা দেখা যেতে পারে।
মাল্টার মধ্যে এ ধরনের উপাদান গুলো পরিপূর্ণভাবে থাকে বলে এটি গর্ভাবস্থায় মহিলাদের বিশেষ উপকারে আসে।