মানসিক স্বাস্থ্য কিভাবে আমরা ভালো রাখতে পারি?????
বন্ধুরা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় জানার আগে আমাদের যে বিষয়টি জানতে হবে সেটি হলো মানসিক স্বাস্থ্য কি???
মানসিক স্বাস্থ্য কি?
মানসিক স্বাস্থ্য বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে স্বাস্থ্য কাকে বলে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর মতে, “স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক মানসিক এবং সামাজিক এই তিনটি অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি একজন মানুষের স্বাস্থ্য হলো রোগ বালাই মুক্ত সুস্থ শরীর ও সেইসঙ্গে হতাশা বিষন্নতা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত একটি শরীর।”
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য এর অন্যতম উপাদান হলো মনের সুস্থতা বা মানসিক স্বাস্থ্য। মানুষের চিন্তা আবেগ ও আচরণ এই তিন মিলে হলো মানসিক স্বাস্থ্য। এককথায় মানসিক স্বাস্থ্য বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা হলো এককথায় মনের সুখ।
আমাদের প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো সময়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তা সে কর্মজীবনে হোক বা ব্যক্তিগত জীবনে। অনেক সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে গিয়ে আমাদের মানসিক অবসাদ, বিষন্নতার শিকার হতে হয়। আমরা যখন দেখি আমাদের স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে তখনই মানসিক অসুস্থতার প্রশ্নটি সামনে আসে।
দেখা যায় যে, আমরা শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা সচেতন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ততটা সচেতন দেখায় না। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে তার শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। কারণ শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর তথ্য থেকে জানা যায় যে প্রায় ৭.৫ শতাংশ বাংলাদেশী নাগরিক মানসিক সমস্যার শিকার হচ্ছে। এই দেশে আক্রান্তের পরিমাণ বিশ্বে মোট আক্রান্তের প্রায় ১৫ শতাংশ। আর চিন্তার বিষয় হল,
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর মতে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনগুলোতে আরো বেশি মানুষ এই মানসিক অবসাদের শিকার হবে।
কিন্তু বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় কি সম্ভব নয়………এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা???????
অবশ্য়য় সম্ভব। যদি আমরা এই সকল মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারি এবং এর সঠিক সমাধান করতে পারি।
এখন যে বিষয়ে আপনাদের সাথে কথা বলব সেটি হলো মানসিক স্বাস্থ্য কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য। শরীরকে সুস্থ রাখে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি হল মনকে সুস্থ রাখা।
মানসিক স্বাস্থ্য কেন আমাদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণঃ
তার কিছু কারণ আমরা নিয়েছি এখন উল্লেখ করব
- প্রথমত মানুষের স্বাস্থ্য যদি আমাদের ভালো থাকে তাহলে দৈনন্দিন কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারা যায়।
- পরিবার ও সমাজের সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে চলতে পারা যায়।
- স্বাভাবিক ও সুস্থ অভিযোজনে মানুষ সক্ষম হয়।
- বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
- এবং মানুষ আরো বেশী উৎপাদনশীল ও সৃজনশীল হতে পারে।
- নিজের ও সমাজের উন্নয়নে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
এখন আমরা জানবো কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে হয়। অর্থাৎ
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়ঃ
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার প্রথম উপায় হলো
- নিজের যত্ন নিতে হবে। মানসিক সুস্থতা পেতে নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
- অবদমিত আবেগ প্রকাশের ফলে মানসিক চাপ ও জটিলতা কমে যায়।
- নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা রাখতে হয় নিজের মনের কথা শুনতে হয়।
- বই পড়া এবং গান শোনাও দরকার।
- অতীত ও ভবিষ্যৎ ভুলে বর্তমান দেখার চেষ্টা করতে হয়।
- তাছাড়া গতানুগতিক ডিসিপ্লিন জীবনে না থেকে একটু নিজের মত সময় কাটানোর দরকার।
- পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার কেবল আমাদের শরীরকে নয় এমন কি মন কে ও ভালো রাখে। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের বিষন্নতার জন্য মারাত্মক ভাবে দায়ী। ভিটামিন বি টুয়েলভ, ওমেগা 3, ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার আমাদের মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন গুলোকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
- এছাড়া তাজা ফলমূল ও শাকসবজি একটা বড় ভূমিকা রাখে। আমাদের মানসিক শাস্তি পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের ঠিক থাকে।
- শরীর সুস্থ রাখতে যেমন পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। তেমনি মনকে সুস্থ রাখতেও ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। কারণ পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে। ফলে আমরা ক্লান্তি বোধ করি। কমে যায় আমাদের কর্মস্পৃহা। ঘুম আমাদের শরীরে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ গুলো সারিয়ে তোলে। আমাদের মনকে চাঙ্গা করে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুব বেশি জরুরি।
- এরপরে নিয়মিত ব্যায়াম। মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শারীরিক ব্যায়াম খুবই জরুরী। স্ট্রেস ও বিষণ্নতা কাটাতে ভীষণ কাজে লাগে। ব্যায়ামের ফলে শরীরের ক্লান্তি ও মানসিক চাপ হ্রাস পায়। তাই মনকে চাঙ্গা রাখতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
- শখের কাজ করা। নিয়মিত অভ্যাসের একটু বাইরে গিয়ে যেসব বিষয়ে করলে মন ভাল থাকে ওই ধরনের কাজ করা। যেমন অনেকের ছবি আঁকতে ভালো লাগে, বাগান করতে ভালো লাগে,রান্না করতে ভালো লাগে, যখন মন খারাপ থাকবে তখন এই ধরনের কাজগুলো করা উচিত এতে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়।
- নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিত
- মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটালে মানসিক হতাশা অনেকাংশে কেটে যায়। পরিবারের সাথে মন খুলে মেলামেশা করলে, মন খুলে কথা বললে, আলিঙ্গন করলে, মানসিক হতাশা অনেকাংশে কমে মানসিক সুস্থতা লাভ করা যায়।
- এছাড়াও অন্য একটি উপায় রয়েছে যার মধ্য দিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়, সেটি হল নিজের মনের যত গোপন কথা অর্থাৎ যে সকল বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছেন, কাছের কোন মানুষের সাথে কথা গুলো শেয়ার করা। এতে করে নিজের মন অনেক হালকা হয়ে যায়। এবং মানসিক সুস্থতা ফিরে পাওয়া যায়।
বন্ধুরা উপরে যে সকল উপায়ে আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এই সকল উপায় খুব মেনে চলা আমাদের জন্য দরকার। কারণ শারীরিক সুস্থতার চেয়ে মানসিক সুস্থতা আমাদের জন্য আরো বেশি দরকার। কারণ মানসিক সুস্থতা শারীরিক সুস্থতার ওপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে।