বিচি কলার উপকারিতা

খুব সাধারণভাবে আমরা জানি যে, যে কলা আমরা খাই অনেক কলাতেই আমরা বিচির অস্তিত্ব খুঁজে পাইনা। কিন্ত আমাদের চারপাশে এমন এক ধরনের কলার প্রজাতি রয়েছে, যে কলাতে প্রচুর পরিমাণে বিচি রয়েছে। এই ধরনের কলা গাছ আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় হরহামেশা দেখা যায়। 

এই বিচি কলা কে আমরা অনেক নামে চিনে থাকি। যেমন এটে কলা, আইট্টা কলা, বাইশ্যা কলা, বিচি কলা প্রভৃতি নামে। বিশেষ করে কলার এই প্রজাতির উৎপত্তি হয়েছিল এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই এই কলার আধিপত্য দেখা যায়। আজকে আপনাদের সাথে এই বিচি কলার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

বিচি কলার উপকারিতাঃ

বিচি কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফলের  নাম। এই বিচি কলার মধ্যে অনেক ধরনের ভিটামিন এর উপস্থিতি রয়েছে। যা আমাদের শরীরের অনেক উপকার সাধন করে থাকে। এই বিচি কলার স্বাদে অন্যান্য কলার তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি হয়ে থাকে। এবং সহজলভ্য দামে এটি বাজারে পাওয়া যায় বলে এর চাহিদাও কিন্তু অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

বিচি কলা গাছ রোপন এর উপকারিতাঃ 

অন্যান্য কলাগাছের তুলনায় বিচি কলা গাছ রোপণ করা অনেক বেশি সহজ ও কম পরিশ্রমের। বিচি কলাগাছ খুব বেশি পরিচর্যা করার প্রয়োজন হয়না। কম পরিচর্যার মাধ্যমে এই কলা গাছ বেড়ে উঠে। বাড়ির আঙ্গিনায় যেকোনো জায়গায় এই কলা গাছ রোপন করা যেতে পারে। অন্যান্য কলা গাছ রোপণের ১২-১৩ মাসের মধ্যে ফল দিলেও বিচি কলা গাছে ফল ধরতে প্রায় ১৮ মাস সময় লেগে যায়। কিন্তু বিচি কলা গাছের ফল অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

বিচি কলায় থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমূহঃ

প্রথমেই বলেছি বিচি কলা খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। বিচি কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, পটাশিয়াম, আয়রন রয়েছে। পাশাপাশি ভিটামিন বি টুয়েলভ, ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন সি, ও ভিটামিন ডি এর অসাধারন একটি উৎস হচ্ছে এই বিচি কলা। তাই আমাদের শরীরে এই সকল ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে আমরা বিচি কলা আমাদের নিয়মিত ফলের তালিকায় রাখতে পারি।

শারীরিক সমস্যা সমাধানে বিচি কলার অসাধারণ কিছু উপকারিতাঃ

বিচি কলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন থাকার পরেও এটি আমাদের শরীরের বেশ কিছু অসাধারণ ঔষধি গুণ করে থাকে। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করব……………

শরীরের বিভিন্ন ধরনের টিস্যু তৈরি করতে বিচি কলার উপকারিতাঃ

বিচি কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপকারী টিস্যু তৈরি করতে কাজ করে থাকে।

শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়াতে বিচি কলার উপকারিতাঃ 

বিচি কলার বিচির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরে নতুন নতুন এন্টিবডি উৎপাদন করতে কার্যকরীভাবে ভূমিকা রাখে। যাদের শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার দুর্বল তারা বিচি কলা ভিটামিন হিসেবে খেতে পারেন।

প্রস্রাবের সমস্যা বা প্রসাবে জালাপোড়া দুর করতে বিচি কলার উপকারিতাঃ 

বিচি কলার উপকারিতা গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের প্রস্রাবের সমস্যা বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া রয়েছে, তারা যদি বিচি কলা ফালি করে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন, তাহলে তাদের প্রস্রাবের সমস্যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থেকে খুব দ্রুত উপশম পাবে।

ডায়রিয়া বা আমাশয় জনিত সমস্যা সমাধানে বিচি কলার উপকারিতাঃ

বিচি কলার মধ্যে এমন কিছু এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে বা বিচি কলার বিচির মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের ডায়রিয়া বা আমাশয় সমস্যা রোধ করতে কাজ করতে পারে। তাই যাদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে বা আমাশয় এর মতো সমস্যা দেখা যায়, তারা সকালে এবং বিকেলে বিচি কলা খেয়ে এ সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারেন।

আলসার নিরাময়ে বা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিচি কলার উপকারিতাঃ

আলসার সমস্যা সমাধানে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিয়মিতভাবে বিচি কলা খেতে পারেন।  বিচি কলার বাকল পেস্ট করে যদি আমরা খেতে পারি তাহলেও আমাদের আলসারের মতো মারাত্মক সমস্যা থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো।

অন্ত্র দায়ক সমস্যা বা কৃমিজনিত সমস্যা দূর করতে বিচি কলার উপকারিতাঃ 

যাদের অন্ত্র দায়ক সমস্যা রয়েছে অথবা কৃমি জনিত সমস্যা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন, তারা বিচি কলাকে প্রতিষেধক হিসেবে নিতে পারেন। বিচি কলা খাওয়ার মাধ্যমে এর থেকে পাওয়া পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সাথে সাথে আমাদের কৃমিজনিত সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে। 

এছাড়াও এই কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পাশাপাশি শরীরের ওজন কমাতেও কিন্তু বিচি কলা কাজ করে থাকে। বিচি কলার উপকারিতা জেনে আমরা বিচি কলা আমাদের খাবারের তালিকায় যোগ করতে পারি।