মুখের ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার গুরুত্ব আর অজানা নেই। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই রূপচর্চার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান এলোভেরা কেই বেছে নিয়েছি। কিন্তু এই এলোভেরা ব্যবহার করে আমরা কি সঠিক এবং কার্যকরী ফলাফল পাচ্ছি? হয়তো না।
কারণ আমরা এলোভেরার সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জানি না। সুপ্রিয় বন্ধুরা তাই আমরা আমাদের আজকের আলোচনাটি সাজিয়েছি এলোভেরা কিভাবে মুখে লাগাবেন এবং এর বিভিন্ন কার্যকরী ব্যবহার বিধি নিয়ে।

তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে আপনি এলোভেরা মুখে লাগাবেন এবং কার্যকরী ফলাফল লাভ করবেনঃ
অ্যালোভেরা কিঃ
অ্যালোভেরা,যার অন্য নাম ঘৃতকুমারী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ওষধি উদ্ভিদ । এতে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেমনঃক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি।

যা আমাদের মানব দেহের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক। দুটো ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
★★আশানুরূপ ফল প্রাপ্তির জন্য যেসব নিয়মে মুখে অ্যালোভেরা লাগাবেনঃ
★বাজার কিংবা সংগ্রহের স্থান থেকে যথাসম্ভব সতেজ এলোভেরার পাতা সংগ্রহ করুন।। এবং নিশ্চিত হয়ে নিন সেখানে কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়নি। অন্যথায় এটি আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
★অ্যালোভেরা কাটার পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।

★পরিষ্কার কিছু ব্যবহার করে পরিমান মত এলোভেরা কেটে নিন।
★ব্যবহারের সুবিধার্থে অ্যালোভেরার কাটা অংশ সরাসরি মুখে না লাগিয়ে এর ভেতরের নরম পদার্থ টা চামচ দিয়ে বের করে নিন। তারপর হাতের সাহায্যে জেলের মত নরম করে নিন।
★ মুখে এলোভেরা ব্যবহারের পূর্বে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

★ ভালো ফলাফলের জন্য তুলো অথবা মুখের ব্রাশ ব্যবহার করুন।
★অ্যালোভেরার জেল মাখিয়ে আলতোভাবে মালিশ করতে থাকুন তিন থেকে পাঁচ মিনিট।
★ ব্যবহারের পর ধুয়ে না ফেলে 15 থেকে 20 মিনিট অপেক্ষা করুন। অ্যালোভেরার জেল সম্পূর্ণভাবে শুকানোর সময় দিন।
★ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে আপনার মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সতর্কীকরণঃ
★★কাটার পর এলোভেরা সরাসরি মুখে না লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এর ফলে এলোভেরার কাটার স্থান থেকে কিছু হলুদ রঙের জলীয় পদার্থ বের হবে। তা পরিস্কার কোন কিছু দিয়ে মুছে নিন। অন্যথায় অনেক সময়ই এই হলুদ নির্যাস আপনার ত্বকের জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে।

★★ আপনার ত্বকে যদি এলার্জি থাকে তাহলে সরাসরি মুখে এলোভেরা জেল ব্যবহার না করে, হাতে বা শরীরের অন্য যেকোন জায়গায় ব্যবহার করে দেখুন।
আমরা সংকর জাতি হিসেবে আমাদের ত্বকের বৈচিত্র প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়। আমাদের কারো ত্বক তৈলাক্ত, আবার কারো ত্বক রুক্ষ শুষ্ক জীর্ণ,আবার এমন অনেক লোক আছে যেগুলো অনেক সেনসিটিভ হয়। তাই মুখে শুধুমাত্র এলোভেরা জেল ব্যবহার না করে।।
নিম্নোক্ত মিশ্রণ গুলো অ্যালোভেরার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

★★ কাঙ্খিত ফল প্রাপ্তির জন্য মুখে অ্যালোভেরা সাথে যে সমস্ত উপাদান ব্যবহার করবেনঃ
★ মধু এবং অ্যালোভেরার রস এর মিশ্রণ মুখের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
★দুই চামচ অ্যালোভেরার রস, একটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ লেবুর রস মিশ্রণ তৈরী করুন।
★ দুই চামচ অ্যালোভেরার রস,শুকনো কমলালেবুর খোসার গুড়া,চালের গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
★গোলাপ জল ও অ্যালোভেরা একসঙ্গে ব্যবহার করুন।

★এলোভেরার সঙ্গে মুলতানি মাটি এবং। চন্দন পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
★★ এছাড়াও মুখে ব্যবহারের জন্য অ্যালোভেরার সাথে দুধ, চন্দন, তুলসী পাতা,মসুর ডালের গুডা। ইত্যাদি মিশ্রণ ব্যবহার করে। আশানুরূপ ফলাফল পেতে পারেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
উপরোক্ত আলোচিত উপাদানের মিশ্রণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিতে আমাদের বিভিন্ন ফেসপ্যাক বিষয়ক কলামগুলো পড়ুন।

★★মুখে এলোভেরা জেল ব্যবহারের কার্যকারিতাঃ
★ বিভিন্ন মিশ্রণ ব্যবহার করে তৈলাক্ত শুষ্ক এবং সেনসিটিভ সব ধরনের ত্বকেই এলোভেরা ব্যবহার করা যায়।
★অ্যালোভেরা আপনার ত্বককে সজীব এবং প্রাণবন্ত করে রাখে।
★অ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ত্বকের রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

★ত্বকের বলিরেখা এবং দাগ দূরীকরণে এলোভেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
★ ব্রণ নিরাময়ে অ্যালোভেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
★ ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
উপরে উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও এলোভেরার রয়েছে আরও অসংখ্য উপকারিতা। যা আলোচনা করেও শেষ করা যাবে না।অ্যালোভেরা আমাদের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য এবং বাহ্যিক ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেষজ উপাদান। তাই আসুন আমরা এর সঠিক ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জানি এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের মুখের যত্ন গ্রহণ করি।
ধন্যবাদ