কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না!
আমরা যারা নিয়মিত শরীরচর্চা / ব্যায়াম করি, তাদেরকে নিজের শরীরকে ফিট করার জন্য ট্রেইনার সাধারণত ছোলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কাঁচা ছোলার বৈজ্ঞানিক নাম (Cicer arietinum) যা একট ডাল জাতীয় শস্য এবং একে বলা হয় ছোলা বা চানা। মুখরোচক খাদ্য এবং প্রোটিনের ভরপুর এই শস্যদানা পশ্চিম এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশে চাষ করা হয়। এই ছোলার গাছ গুলো সাধারনত ১মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং পালকের মতো দেখতে দুইপাশে পাতা থাকে। এর একটি বীজপত্রে ২ থেকে ৩টি করে ডালবীজ থাকে। ছোলা গাছের ফুলগুলো সাধারণত সাদা, নীল ও লালচে রঙের মতো হয়। বৃষ্টিপাত ছোলা গাছের জন্যে জরুরি। ছোলা সাধারণত ২ ধরণের হয় দেশী ছোলা ও কাবুলি ছোলা।
আসুন জেনে নিই কাঁচা ছোলা খাওয়ার দশটি উপকারিতাঃ
১।ছোলা আমাদের শরীরের জন্যে খুবই উপকারী। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তৈরি করে। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে আদার সাথে খেলে আমাদের শরীরে এক ধরণের আমিষ ও এন্টিবায়োটিক তৈরি হয়। এই আমিষ ও এন্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
২।আমাদের অনেকের ই শরীরে জয়েন্টে মেরুদণ্ডে সাধারণত সমস্যার কথা শুনেছি। এই ছোলাতে রয়েছে ভিটামিন বি। এই ভিটামিন বি স্নায়ুর দূর্বলতা ও মেরুদণ্ডের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
৩।এই ছোলাতে রয়েছে আরো একটি বিশেষ উপাদান যেমন সালফার। শরীরে সালফারের অভাব থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জ্বালাপোড়া করে। এই জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে ছোলা খেতে পারবেন।
৪।আমরা রমজান মাসে ১মাস রোজা রাখি। তখন দিনে অনাহার থাকার ফলে আমাদের শরীরের অনেক শক্তি কমে যায়। তাই আমরা ইফতারের সময় অন্যান্য খাবারের সাথে ছোলাকে ও রাখা হয়ছে। কেননা ১০০গ্রাম ছোলাতে রয়েছে ৩৬০ ক্যালরির অধিক শক্তি।
৫।যারা অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন অর্থাৎ ডায়েটে আছেন তারা চাইলে ছোলা খাইতে পারেন। এতে আপনার প্রোটিনের ঘাটতি ও হলো না। আপনার ক্যালরি ও ঠিক ভাবে থাকবে। ফলে শরীর দূর্বল হবেনা।
৬। যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তারা চাইলে ছোলাকে ডাল হিসেবে খেতে পারেন। এটা খুবই উপকারী। কেননা ছোলাতে রয়েছে উচ্চ আঁশ। এই আঁশ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ রাখে। এবং ছোলা খেলে শর্করার পরিমাণ টা অ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
৭।আমরা আগেই জেনেছি ছোলা হলো আঁশ জাতীয় ডাল। আমাদের অনেকেরই কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ পায়খানা শক্ত হয়। এতে করে ছোলা খেলে সেই আঁশ খাবারের সাথে হজম হয়না। এটি খাদ্যনালী অতিক্রম করে। ফলে পায়খানা নরম হয় ও পায়খানার পরিমাণ ও বৃদ্ধি পায়।
৮।আমরা প্রতিদিনের খাদ্য হিসেবে ছোলাকে ডাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। কেননা এই ছোলাতে রয়েছে আমিষ, ফসফরাস,আয়রন,কপার, খাদ্য আঁশ। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপাদানের মান বজায় রাখে।
৯।যারা প্রতিদিন প্রায়ি ১থেকে ২কাপ ছোলা,শিম,মটর একসাথে মিশিয়ে খাবে তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। আর যাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা আছে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ছোলা ব্যবহার করতে পারেন। কেননা ছোলাতে থাকা ফলিক এসিড এই সমস্যা সমাধান করতে পারে।
১০।আমাদের অনেকেরই শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরোনো কফে সমস্যা করে। এই পুরানো কফের সমস্যা সারাতে ছোলা খুবই উপকারী। এছাড়া যৌনশক্তি বাড়াতে ছোলার ভূমিকা রয়েছে। ছোলাতে যে আঁশ রয়েছে অর্থাৎ ডায়াটারি ফাইবার তা যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ছোলা অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। একটা পদ্ধতি হলো ছোলাকে গুড়া করে ছাতু বানিয়ে খাওয়া যায়। বাচ্চাদের খাবারের ক্ষেত্রে ছোলার ছাতু ব্যবহার করা হয়। এছাড়া যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান তারাও এই ছাতু ব্যবহার করতে পারেন। আবার ছোলাকে চাইলে ভেজে বা সিদ্ধ করে খেতে পারবেন। একে বলা হয় আস্ত ছোলা। আর তেল মশলা দিয়ে ভেজে যে ছোলা খাওয়া হয় তাকে বলা হয় বুনা ছোলা। অর্থাৎ চাইলে অনেক ভাবেই খাওয়া যাবে এই ছোলাকে। তাই শুধু রমজানেই নয় চাইলে ১২মাস খেতে পারবেন এই ছোলা। তবে নিয়মমাফিক খেলে শরীর, স্বাস্থ্য ও খাদ্য গুণাগুণ মান সবটাই ঠিক থাকে।