গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যারা ভোগেন তারা নিশ্চয়ই জানেন বিষয়টি কতটা ভয়ঙ্কর এবং কতটা অসহ্যকর। সাধারণত কিছু অভ্যাসের কারণে আমাদের এটি হয়। বলতে গেলে আমাদের কিছু বদভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে।
অন্য যেকোনো রোগের চেয়ে মাঝে মাঝে খারাপ আকার ধারণ করতে পারে এই গ্যাষ্ট্রিক।
কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সহজে আমরা এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। তার আগে আমাদের জানতে হবে গ্যাস্ট্রিক আসলে কি??????
গ্যাস্ট্রিক কি?
বৈজ্ঞানিকভাবে যে জিনিসটিকে গ্যাস্ট্রিক বলা হয় সেটির আসল নাম হচ্ছে পেপটিক আলসার ডিজিজ। এসিডের কারণে এটাকে বলে পেপটিক আলসার ডিজিজ। এবং যখন বলা হচ্ছে গ্যাস্টিক আছে তখন বোঝা হচ্ছে তার পেপটিক আলসার রয়েছে। এটা পাকস্থলিতে বা ডিওডেনামে হতে পারে।
এখন আমরা জানবো……
গ্যাষ্ট্রিক কেন আমাদের হয়ে থাকে?
মানসিক অশান্তি
- মানসিকভাবে কোন কিছু নিয়ে টেনশন করলে, কষ্ট, আঘাত, প্রভৃতির কারনে গ্যাস্টিক হতে পারে।
খাবার থেকে
- অখাদ্য-কুখাদ্য থেকে অধিকাংশ গ্যাস্ট্রিক হতে দেখা যায়। অনেকে বলেন না খেয়ে থাকলে কি গ্যাস্ট্রিক হয়?????
একদমই ঠিক না। রোজার মাসে রোজাদাররা দীর্ঘ ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা যেকোন ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকে, তখন তো কারো হতে দেখা যায় না। বরং তখন গ্যাস্ট্রিক ভাল হয়ে যায়। এর কারন হল অধিকাংশ ক্ষেত্রে অখাদ্য খাবার থেকে গ্যাস্ট্রিক হতে দেখা যায়। যেমন কনডেসমিল্ক নামক পামঅয়েলের দানাদার খাবারের মধ্যে রয়েছে কাপড়ের রং, ভেজাল অতিরিক্ত পচা বাসি খাবার যেকোন প্রকার কেমিক্যাল যুক্ত খাবার, হাইড্রোজ মিশ্রিত খাবার সোডা মিশ্রিত খাবার, দুধ চা প্রভৃতি।
অতিরিক্ত খাবার
- আমাদের অধিকাংশরায় অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ক্রেডিট বলে মনে করি। শুধু খাবার নয়, খাওয়ানো উত্তম, আতিথিয়তা নিদর্শন হিসাবে ধরে নেয়। অথচ অতিরিক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ। ইসলামী নিয়ম মেনে আহার উত্তম এবং প্রতি বেলাতে ব্যক্তির মোট খাবারের পরিমাণ এর তিন ভাগের এক ভাগ। এবং পানি একবার খালি পেটে রেখে খাবার সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ পুরো খাবারের পেটের অংশকে যদি তিন ভাগে ভাগ করা হয় একবার খাবার দিয়ে একবার পানি দিয়ে আর একবার খালি রাখতে হবে। যেমনটা আমরা কোন ব্লেন্ডার মেশিনে খাবার ব্লান্ড করার ক্ষেত্রে করে থাকি।
কথোপকথন
- খাবারের সময় কথা বলা থেকে যতদূর সম্ভব বিরত থাকাকে ইসলামের নীতিতে বলা হয়েছে। এমনকি খাবার গ্রহণের সময় সালাম বিনিময় থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য গ্রহণের সময় মনোযোগ অন্য কোন স্থানে চলে গেলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারেনা প্লেটের খাবারের জন্য কতটুকু নির্গত করে পাকস্থলি কে কর টুকু দিতে হবে। ফলে পাকস্থলীতে গিয়ে নানা ধরনের বিপত্তি করে এবং হজম হতে বাধা দান করে।
একদফায় খাবার নেওয়া
- হিন্দু ধর্ম মতে খাবার একবার প্লেটে নিতে হবে বারবার প্লেটে খাবার নেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত খাবার খেলে মস্তিষ্কের সঠিক পরিমাণ পাচক রস নিষ্কাশন করতে পারেনা
ঘুম
- ঘুমের সমস্যার কারণে বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারণে গ্যাস্ট্রিক দেখা দিতে পারে।
লিভার ফাংশন
- গ্যাস্ট্রিক দেখা দিতে পারে লিভার ফাংশন এ কোন কারনে কোন সমস্যা হলে। এ গুলো যোগ হলে।
- ধূমপান বা বিভিন্ন প্রকার ঔষধ সেবনের কারণে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
উপরোক্ত কারণগুলো যা বললাম তা যদি আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এড়িয়ে চলি তাহলে আমরা গ্যাস্ট্রিক হতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারব।
বন্ধুরা এখন আমরা জানবো কিভাবে আমরা এই গ্যাস্ট্রিক থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব অর্থাৎ
গ্যাস্ট্রিক হলে আমরা কি করব
- খাবার খাওয়ার পরেসাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়বেন না। কারণ খাবার হজম না হলে পেটে গ্যাস তৈরি করে।
- তেল জাতীয় খাবার ডুবো তেলে ভাজা যেকোনো ধরনের তৈলাক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যে শাকসবজি গুলো সহজে হজম হয় না যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, এ ধরনের খাবার গুলো গ্যাস তৈরি করে। এই ধরনের খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- যেকোনো ধরনের ডাল যেমন মসুরের ডাল, ছোলা, বুট, সয়াবিন, ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। কারণ এইগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সুগার, এবং ফাইবার। যা সহজে হজম হতে চায় না এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
এখন আমাদের এই গ্যাস্ট্রিক সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করতে হলে কি কি করতে হবে
- ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
- তেলজাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে।
- শসা আমাদের কম খেতে হবে।
- আদার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ আদা চায়ের সাথে খেতে কষ্টকর হলেও এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ক্ষেত্রে অনেক ভালো কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- লবঙ্গ ও তাৎক্ষণিক গ্যাসের ব্যথা কমিয়ে আনে। দুই থেকে তিনটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষলে অথবা সমপরিমাণ এলাচ ও লবঙ্গ খেলে বুকের জ্বালা দূর হয়।
বন্ধুরা উপরে অনেকগুলো কারণ এবং এর সমাধান আমরা আজকে আপনাদের জন্য দিয়েছি। আমার মনে হয় আপনারা যদি এগুলো ভালোমতো অনুসরণ করেন আপনাদের সকল সমস্যার সমাধান হবে। ধন্যবাদ।