কালোজিরা হলো একটি মৌসুমী গাছ, এটি সাধারণত মাঝারি আকারের হয় এবং এতে একবার ফুল ও ফল হয়। কালোজিরার বিভিন্ন ইংরেজী শব্দ রয়েছে যেমনঃ (Black Caraway, also known as Black Cumin, Nigella, Kalojeere, এবং Kalonji) তবে এর একটি নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক নাম ও আছে (Nigella Sativa Linn)। কালোজিরার পাঁচটি পাপড়ি বিশিষ্ট দুই ধরণের ফুল হয়, তিন কোণা আকৃতির কালো বীজ ও হয়, এবং কালোজিরার ফল সাধারণত গোলাকার আকৃতির হয় এতে ২০–২৫টি বীজ ও থাকে। কালোজিরার বীজ থেকে তেল তৈরি হয় আর বাসায় সাধারণত মশলার মধ্যেও আমরা কালোজিরা দেখতে পাই। কালোজিরার আরেকটি বিশেষগুণ আছে যেমন এটি আয়ুর্বেদীয়, কবিরাজী ঔষধে ব্যবহার করা হয়।
এবার দেখে নিই কালোজিরার কিছু উপকারিতাঃ
১।সাধারণত যারা ডায়েট করেন তারা রান্নার করার ক্ষেত্রে কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন অর্থাৎ রুটি ও তরকারি রান্না করার ক্ষেত্রে।
২।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কালোজিরার তেল অনেক উপকারী হিসেবে চিহ্নিত। সকালে প্রতিদিন চা খাওয়ার সময় ডায়াবেটিস রোগীরা চায়ের সাথে ১চা চামচ তেল মিশিয়ে পান করতে পারেন।

৩।আজকাল মাল্টিমিডিয়ার যুগে আমরা কম বেশি সকলে মোবাইল ফোন,ল্যাপটপ এর উপর নির্ভর হয়ে গেছি। আর এই মোবাইলের রেডিয়েশন আমাদের সরাসরি চোখে লেগে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তারমধ্যে মাথা ব্যাথা অন্যতম। এই মাথা ব্যাথার সময় মাথার ত্বকে যদি কালো জিরার তেল ম্যাসাজ করা হয় তাহোলে অনেক উপকৃত হবেন।

৪।আমাদের অনেকের ই হাতে–পায়ের জয়েন্টের সমস্যা বেশি। সরিষার তেলের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে হাতে পায়ের জয়েন্টের ম্যাসাজ করলে অনেক উপকৃত হবেন। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
৫।প্রসূতি মায়েদের যাদের বুকের দুধের পরিমাণ কম তাঁরা চাইলে ৫–১০ গ্রাম কালোজিরাকে মিহি করে দুধের সাথে মিশিয়ে রাতে খাওয়ার পরে পান করতে পারেন। এইভাবে ১০–১৫দিন পান করলে উপকৃত হওয়া যাবে।

৬।মেয়েদের চুলের সমস্যা অনেক বেশি। অর্থাৎ চুল পড়া, চুলের গোড়া নরম হওয়া আরো বিভিন্ন সমস্যা। এই ক্ষেত্রে আমরা যদি নিয়মিত চুলের গোড়ায় কালোজিরার তেল ব্যবহার করি তাহোলে উপকৃত হওয়া যাবে।
৭।খাদ্যতালিকায় কালোজিরার ভর্তা রাখুন। হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করবে। এটি নিয়মিত রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পান করতে চাইলে পানি দিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে পান করতে পারেন।

৮।আজকাল বাইরের ধূলাবালির কারণে মুখের ত্বকে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন মুখ তৈলাক্ত হওয়া, ব্রণ হওয়া, মুখে বিভিন্ন দাগ দেখা দেয়। এতে করে কালোজিরা তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দু’বার মুখের ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে অনেক উপকৃত হবেন।
৯।কালোজিরা বিভিন্ন রোগের মহাষৌধ। সর্দি–কাশিতে আরাম পেতে চাইলে এক কাপ লাল চা এর সাথে ১চা চামচ কালোজিরার তেল ও ১চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন উপকৃত হবেন। এছাড়া কালোজিরাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে লিভার ও কিডনি কে সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। কালোজিরা রাসায়নিকের বিষাক্ততা কমাতে পারে।

১০।কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। কালোজিরা যেকোনো জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
১১।নিয়মিত কালোজিরা খেলে দেহে রক্ত সঞ্চালন হয়।। এতে মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং শিশুদের নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ালে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে।

উপরের পদ্ধতি গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আমরা চাইলে প্রত্যেকদিন কালোজিরা চিবিয়ে খেতে পারি। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কেননা কালোজিরায় রয়েছে ভিটামিন, স্ফটিকল নাইজেলোন, অ্যামিনো অ্যাসিড, স্যাপোনিন, ক্রুড ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো লিনোলেনিক, ওলিক অ্যাসিড, উদ্বায়ী তেল, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।