ত্বকের যত্নে ও সুস্থ ত্বক কে বিভিন্ন সমস্যা থেকে দুরে রাখতে প্রাচীনকাল থেকে কাঁচা দুধ আমাদের রূপচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে। বন্ধুরা প্রাচীনকাল থেকে যে কাঁচা দুধ রুপচর্যার কাজে ব্যবহৃত হয় তার উদাহরন আমরা ক্লিওপেট্রার রানীর গল্প থেকে জানতে পারি, যে উনি ত্বকের যত্নে দুধ দিয়ে গোসল করতেন।

ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধের উপকারীতাঃ
- জানা যায় প্রাচীন কাল থেকেই রূপচর্চার জন্য কাঁচা দুধ ব্যবহার করা হতো।
- আর সময়ের সাথে সাথে মানুষ আধুনিক হয়ে নতুন কিছু আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বর্তমানে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে কাঁচা দুধ আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী।
- দুধের সাথে অন্যান্য আরো কিছু উপাদান ত্বকের উপকারিতায় ব্যবহারিত হলে সেটা ত্বকের জন্য আরো কতটা ভালো হয় সেটা আমরা এখন জানতে পেরেছি।
- এছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ও বলেন কাঁচা দুধ ত্বকের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।

কাঁচা দুধের মধ্যে থাকা উপাদান সমূহঃ
বন্ধুরা দুধের মধ্যে এমন কি উপকরণ বা উপাদান রয়েছে যার কারণে কাঁচা দুধ আমাদের মুখের যত্নে বা ত্বকের যত্নে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাহলে আমরা জেনে নিব দুধে কোন উপাদান রয়েছে যা আমাদের ত্বককে সাহায্য করে………
ভিটামিন–এঃ
- প্রধান যে উপাদান রয়েছে সেটি হলো ভিটামিন-এ। অত্যাধিক শুকনো ও ক্ষতিগ্রস্ত চামড়ায় নমনীয়তা ফিরিয়ে আনতে নতুন কোষ গঠন করে মৃত কোষ সরিয়ে দিতে ভিটামিন এ এর জুড়ি নেই। আর এই ভিটামিন এ কাঁচা দুধের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।

ভিটামিন–ডিঃ
- এছাড়া কাঁচা দুধের ভিটামিন ডি কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে ত্বক কে ফ্রিরেডিকেল এর হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রিমেচিউর এজিং হতে দেয় না। অর্থাৎ বয়সের চেয়ে অনেকের ত্বক বেশি বয়স্ক দেখায় অর্থাৎ যত বয়স নয় তার চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধ দেখায়। ভিটামিন ডি, এ ধরনের সমস্যা দূর করে।
- এছাড়া কাঁচা দুধ ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে তোলে ত্বককে করে তোলে দাগমুক্ত, প্রাণবন্ত আর এই ভিটামিনটি কাঁচা দুধে প্রচুর পরিমাণে থাকে।
ভিটামিন b6
- ভিটামিন b6 ত্বকে নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে।
- ত্বকের আদ্রতা ধরে রেখে ত্বককে সজীব রাখে।
- এছাড়া ত্বকের মৃত কোষ ও রোদে পোড়া ভাব থাকলে সেটাও ভিটামিন b6 এর কারনে চলে যায়।

ভিটামিন সিঃ
- দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
ভিটামিন b12
- ভিটামিন b12 ত্বক কে দাগ মুক্ত করে।
- ত্বক উজ্জ্বল করে তোলার ক্ষেত্রে ও ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর করতে যেমন হাতের ও পায়ের নখের রঙ একই ধরনের করে দিতে ভিটামিন বি 12 এর জুড়ি নেই।
- কাঁচা দুধে ভিটামিন থাকে বায়োটিন অত্যাধিক শুষ্ক ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি দিয়ে সারিয়ে তোলে পুনরুজ্জীবিত করে।
- বন্ধুরা আমাদের অনেকের ত্বক শীতকালে ফেটে যায় কিন্তু অনেক গ্রীষ্মকালে ও ফাটা দাগ দেখা যায়।এই ধরণের সমস্যা দূর করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আর এই বায়োটিন।
- কাঁচা দুধে প্রচুর পরিমাণে থাকে প্রোটিন। ত্বকের কোষগুলো রিপেয়ার করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে আর কাঁচা দুধ প্রোটিনের যেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

ল্যাকটিক এসিডঃ
- ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি ও প্রয়োজনীয় আদ্রতা দিতে ল্যাক্টিক এসিড খুব বেশি ভূমিকা রাখে। আর কাঁচা দুধে এই উপাদানটি খুব বেশি পরিমাণে থাকে।
- শুষ্ক ত্বকের চুলকানি একটি সমস্যা। পটাশিয়াম সে সমস্যা দূর করে দেয়।
- দুধের ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ত্বকের সবচেয়ে উপরের লেয়ার তৈরি করে।
- কাঁচা দুধ স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়।
- কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায় ত্বককে ফ্রিরেডিকেল এর হাত থেকে রক্ষা করে। তাই ত্বকের যত্নে ক্যালসিয়াম খুব বেশি দরকার আর কাঁচা দুধে ক্যালসিয়াম অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।
উপরে যে সকল উপাদান এর কথা বললাম তা কাঁচা দুধের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে যার কারণে কাঁচা দুধ ত্বকের যত্নে এত বেশি কার্যকরী।

এখন আমরা দেখব কিভাবে কাঁচা দুধ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা ত্বক কে বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারি। এজন্য আপনাদের জন্য কিছু চমৎকার চমৎকার দুধের ব্যবহার আজকে আমরা নিয়ে এসেছিঃ
ত্বকের থেকে কালো দাগ দূর করতে দুধের সাথে যে সকল উপকরণ ব্যবহার করতে হবেঃ
১। দুধের সাথে লেবু ও মুলতানি মাটিঃ
প্রথমে কাঁচা দুধ, লেবুর রস,মুলতানি মাটি এই তিনটি উপকরণ ভালোমতো মিক্স করে মুখে লাগালে মুখ থেকে রোদে পোড়া কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
২। দুধের সাথে কমলার চামড়াঃ
এই উপাদান গুলো একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে মুখ থেকে বিভিন্ন ধরনের দাগ এর পাশাপাশি তেলতেলে ভাব বা তৈলাক্ত ভাব চলে যাবে।

৩। দুধের সাথে কফি পাওডারঃ
কপি পাউডার এর সাথে দুধের উপকরণ ভালো মতো মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে যেকোনো একটি মশরাজার লাগিয়ে নিলে ত্বক অনেক বেশি নরম তুলতুলে হয়ে যাবে।
৪। দুধের সাথে গাজর ও মধুঃ
ব্রণের সমস্যা দূর করতে কাচা দুধ, মধু, গাজরের পেস্ট ও ডিম সব উপকরণ একসাথে মিক্স করে মুখে লাগাতে হবে। একটা অসাধারণ ফেইস মাক্স তৈরি হয়ে যাবে। এটি আমরা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলবো।

৫। দুধের সাথে হলুদঃ
এরপরে যে উপকরনটি আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি তা তৈরি করতে হলে আমাদের যে সকল উপকরণ লাগবে, কাঁচা দুধ এর সাথে আমাদের রাখতে হবে হলুদ। কাঁচা দুধ হলুদ ও মধু গোসলের আগে ভালো মতো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখ থেকে শুরু করে পুরো শরীরে মেখে নিতে হবে। গোসলের সময় একসাথে ধুয়ে ফেলতে হবে ২০ মিনিটের মত রাখতে হবে।

মুখের ত্বক বা শরীরের ত্বক যেহেতু আমাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পাশাপাশি অনেক সেনসিটিভ তাই যেকোনো উপকরণ ব্যবহারের আগে খুব বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রত্যেকটি উপাদান আপনার ত্বকের সাথে যাচ্ছে কিনা সেটাও চেক করে ব্যবহার করবেন। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।