জনপ্রিয় ফল হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে কলা । কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম , ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই,ভিটামিন বি ও ল্যাকটিন সহ নানান উপাদান আছে যা ত্বককে নানাভাবে উপকারিতা দিয়ে থাকে ।
কলার উপকারিতাঃ
- কলা কালো ও রোদে পুড়া দাগকে দূর করে দেয়। তাই ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে কলার ফেসপ্যাক অসাধারণ কার্যকরী হবে। এক কথায় কলার এই ফেসপ্যাক গুলো ত্বক ফর্সা করার সেরা উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম।
- ফ্রি –রেড়িকেলস ত্বকে বয়সের চাপ সৃষ্টির জন্য দায়ী । কলা ত্বকে ফ্রি – রেড়িকেলসের সাথে যুদ্ধ করে ত্বককে তরুণ করে রাখে ।
- এছাড়াও কলা ত্বকের বয়সের চাপ দূর করতে পারদর্শী। এটি ত্বক হতে বলিরেখা ,ডার্ক সার্কেলস ফাইনলাইন ও ব্রণ দূর করে ত্বককে ফ্রেশ রাখে।
- কলার মধ্যে ত্বকের জন্য এমন সব উপকারিতা থাকায় কলার ফেসপ্যাক ত্বকের জন্য খুব উপকারি ।
তাই, আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব ভিবিন্ন ত্বকের উপযোগী কলার ফেসপ্যাক ।
১. ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে দই ও কলার ফেসপ্যাকঃ
এই ফেসপ্যাকটি ত্বক হতে বলিরেখা,ফাইন-লাইনস, কালো ও রোদে পুড়া দাগ দূর করে ত্বককে তরুণ করে তুলবে। এই ফেসপ্যাকটি ত্বককে বয়সের চাপ সৃষ্টি হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং এটি ত্বকে অ্যান্ট – এইজিং মাস্ক হিসেবে কাজ করে ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করবে।
ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
- কলার পেষ্ট –২ টেবিল চামচ
- টক দই –১ টেবিল চামচ
- মধু – ১ টেবিল চামচ ও
- লেবুর রস – ১ টেবিল চামচ
ফেসপ্যাক তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ
ধাপঃ
প্রথমে একটি পাকা কলা নিয়ে টুকরো করে কেটে ব্লান্ড করে নিন ।
এরপর একটি পরিস্কার বাটিতে কলার পেষ্ট, টক দই ,মধু ও লেবুর রস একসাথে নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নরম পেষ্ট করে নিলেই তৈরী হয়ে যাবে ব্যবহারের উপযুক্ত ফেসপ্যাক ।
প্যাক তৈরী হয়ে গেলে ব্রাশ বা তুলার প্যাডের সাহায্যে প্যাকটি ঠোঁট ও চোখ ব্যাতিত সারা মুখে লাগান এবং
২০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।
কাজ করার কারণঃ
টক দইঃ
দইয়ের মধ্যে আছে ল্যাকটিক এসিড যা ত্বক হতে কালো ও রোদে পুড়া দাগকে দূর করবে ।এছাড়াও দইয়ের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি – এইজিং প্রোপারটি যা ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে ।এছাড়াও দইয়ের মধ্যে আরো রয়েছে ভিটামিন বি-৫ যা ত্বক থেকে ডার্ক স্পট ,বয়সের চাপও ব্রণের দাগ দূর করে দিয়ে ত্বককে দাগমুক্ত রাখে।
মধুঃ
মধুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল প্রোপার্টি যা ত্বকে ব্রণসৃষ্টকারী জীবাণু ও অন্যান্য জীবাণুকে মেরে ফেলে ত্বককে জীবাণু মুক্ত রাখে।
লেবুর রসঃ
লেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ব্লিচিং প্রোপার্টি যা ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে । লেবুতে আরো আছে সাইট্রিক এসিড ও ভিটামিন সি যা ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে অতি মাত্রায় ফর্সা করে তুলে ।
কোন ত্বকের জন্য উপযোগীঃ
সবধরণের ত্বকের জন্য উপযোগী।
নোটঃ
১) ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন ।
২) সেনসেটিভ ও শুষ্ক ত্বকের বন্ধুরা এবং যাদের ত্বকে রোগ ও এলার্জি আছে তারা প্যাকটিতে লেবুর রস ব্যবহার করবেন না ।
২. ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার জন্য হলুদ ও কলার ফেসপ্যাকঃ
ত্বককে জীবাণুর আক্রমণের হাত থেকে করে ত্বকের কালচে ভাব দূর করে ত্বককে খুব দ্রুত ফর্সা করতে এই প্যাকটি অসাধারণ হবে।
ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
- কলার পেষ্ট –৩ টেবিল চামচ
- হলুদ গুড়া – ১ চা চামচ ও
- কমলার রস – ১ টেবিল চামচ
ফেসপ্যাক তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ
ধাপঃ
প্রথমে একটি পাকা কলাকে টুকরো করে কেটে ব্লান্ড করে নিন ।
এরপর একটি পরিস্কার কাচেঁর বাটিতে কলার পেষ্ট ,হলুদ গুড়া ও কমলার রস একসাথে নিয়ে সবগুলো উপাদান মিশিয়ে প্যাক তৈরী করুন।
মুখ পরিস্কার করে নিয়ে প্যাকটি সারা মুখে লাগান।প্যাক লাগানোর সময় খেয়াল রাখবেন প্যাক চোখ ও ঠোঁটে যেন না লাগে।
প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন ।
১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিস্কার করে নিন।
ত্বকে কিভাবে কাজ করবেঃ
হলুদ গুড়াঃ
হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট । অক্সিডেন্টের কাজ হলো ত্বক হতে রোদে পুড়া কালো দাগ ,তামাটে ভাব ও ত্বকের কালচে রং দূর করে দিয়ে ত্বককে ভিতর থেকে ফর্সা করে তুলা । এছাড়াও হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল প্রোপার্টি ত্বকে ব্রণসৃষ্টকারী জীবাণু ও অন্যান্য জীবাণুকে ধ্বংস করে ত্বককে জীবাণুমুক্ত রাখে যার কারণে ত্বক হতে ব্রণ দূর হয়ে যায়। আর হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি –ইনপ্লেমেটরি প্রোপার্টি ত্বকে ব্রণের ফলে সৃষ্ট হওয়া জ্বালাকেও কমিয়ে আনে। আর হলুদ ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকে বয়সের চাপ সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্রি-রেডিকেলসের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ত্বক হতে ডার্ক স্পট, ফাইনলাইনস ও বলিরেখার মত বয়সের বিভিন্ন চিহ্নকে দূর করে দেয়।
কমলার রসঃ
কমলার মধ্যে ভিটামিন সি আছে যা ত্বকের ব্রণ, ত্বকের দাগ ও বিভিন্ন অবাঞ্ছিত কালো চিহ্ন দূর করে ত্বককে ব্রণ মুক্ত রাখে।
কোন ত্বকের জন্যঃ
সব ধরণের ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন তবে এটি ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য বেশ উপকারি।
নোটঃ
১) প্যাকটির যতার্থ উপকারিতা পেতে চাইলে সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করুন।
৩. ত্বককে উজ্জ্বল ,নরম ও মসৃণ করতে অ্যালোভেরা ও কলার ফেসপ্যাকঃ
অ্যালোভেরা ও কলার ফেসপ্যাকটি ত্বককে ময়শ্চারাইজ করবে । এটি ত্বকের মৃত কোষকে দূর করে দিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল ,নরম ও মসৃণ করে তুলবে।
ফেসপ্যাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
- কলার পেষ্ট– ২ টেবিল চামচ
- অ্যালোভেরা জেল –১ টেবিল চামচ
- জলপাই তৈল ( অলিভ অয়েল ) – ১ চা চামচ
ফেসপ্যাক তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতিঃ
ধাপঃ
প্রথমে একটি পাকা কলাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ব্লান্ড করে নিন।
এরপর একটি পরিস্কার কাচেঁর বাটিতে সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নরম পেষ্ট করে নিলেই তৈরী হয়ে যাবে ব্যবহারের উপযুক্ত ফেসপ্যাক ।
ব্রাশ বা তুলার প্যাডের সাহায্যে প্যাকটি মুখে লাগান । প্যাকটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ঠোঁট ও চোখে লাগাবেন না ।
১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন ।
কাজ করার কারণঃ
অ্যালোভেরা জেলঃ
অ্যালোভেরা ত্বককে সূর্যের আল্ট্রা – ভায়োলেট ও গামা রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব হতে রক্ষা করে । এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে ময়শ্চারাইজ করার ক্ষমতা রাখে । অ্যালোভেরার অ্যান্টি – সেফটিভ প্রোপার্টি ত্বককে জীবাণু ও দাগ মুক্ত করতে সহায়তা করে । অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ইনপ্লেমেটরি প্রোপার্টি ত্বকের জ্বালা কমিয়ে আনে। এছাড়াও অ্যালোভেরা ত্বকে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
জলপাই তৈল ( অলিভ অয়েল )ঃ
অলিভ অয়েলের মধ্যে আছে অলিক এসিড , লাইকোলিক সহ নানা উপাদান যা ত্বকের টিস্যুর স্বাস্থ্যকে উন্নত করে বিধায় ত্বকের স্বাস্থ্য সুস্থ্য থাকে । এছাড়াও অলিভ অয়েল ত্বককে গভীর হতে ময়শ্চারাইজ করে ত্বককে কোমল করে তুলে ।
কোন ত্বকের জন্য উপযোগীঃ
শুষ্ক, সেনসেটিভ ও স্বাভাবিক ত্বকের জন্য ।
নোটঃ
১) ভাল ফলাফল পেতে চাইলে সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করুন ।
২) অলিভ অয়েল না থাকলে অলিভ অয়েলের পরিবর্তে ক্যাসটর অয়েল ব্যবহার করতে পারবেন ।
ত্বকের ধরণ অনুযায়ী এ সকল প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে ওঠবে আরো বেশী দীপ্তময় ,উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় এবং এই ফেসপ্যাকগুলো আপনাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী প্রভাব ফেলেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে আমার সাথে শেয়ার করবেন ।