ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার ও অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা

প্রকৃতির এক অসাধারণ দান হচ্ছে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা কে প্রাকৃতিক ক্লিনজার নামেও ডাকা হয়। আশা করি এলোভেরা সম্পর্কে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা সারাবিশ্বে অ্যালোভেরার জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার মতো লোক নেই বললেই চলে। তবে সকলেই অ্যালোভেরার গাছকে এক নামে ডাকে না । একেক দেশে একেক নামে ডাকে এই গাছকে। 

 অ্যালোভেরা গাছ 

একেক দেশে অ্যালোভেরা গাছকে একেক নামে ডাকলেও ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার ও অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা সবার জন্য একই রকম। অ্যালোভেরার উপকারিতা অনেক থাকলেও আমরা অনেকেই এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানিনা । চলুন, অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।   

সবার প্রথমে জানিয়ে রাখতে চাই 

কেন আপনি অ্যালোভেরা ব্যবহার করবেন?

অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা 

প্রকৃতিতে অ্যালোভেরার মত উপকারী বস্তু খুব কমই আছে। একদিকে স্বাস্থ্য রক্ষায়, ওজন কমাতে , শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নানা রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার দিতে অ্যালোভেরার যেমন জুড়ি নেই ঠিক তেমনি অন্যদিকে রূপচর্চায় ত্বক , চুল ও ত্বকের পরিচর্যায় এটি কার্যকরী। অ্যালোভেরায় ধারণকৃত উপাদানগুলোর মধ্যে আছে শক্তিশালী ভিটামিন, মিনারেল , এনজাইম লিগনিন , অ্যামাইনো এসিড ও স্যালিসাইলিক এসিড সহ নানা উপাদান ।

এই সকল উপাদান থাকার কারণেই অ্যালোভেরা এতটা উপকারী । আজকে আমি আপনাদের ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা গুলো শেয়ার করছি। 

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার ও অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতাঃ 

সবরকম উপকারিতার মধ্যে অ্যালোভেরা সবচেয়ে বেশি উপকারী ত্বকের জন্য। এটি ত্বকের প্রায় সব রকমের সমস্যার সমাধান দিয়ে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে ত্বকের চিকিৎসা করেত্বকের জন্য এলোভেরা আরো অনেক গুণাগুণ রয়েছে তা হলোঃ-

১। ক্লিনজারঃ

অ্যালোভেরার আরেক নাম হচ্ছে প্রাকৃতিক ক্লিনজার ।

অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা স্পোনিন এ আছে ক্লিনজিং প্রপার্টি , এটি ত্বককে পরিষ্কার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে । 

২। ব্রন ও ব্রনের দাগ দূর করেঃ

ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন না এমন লোকের সংখ্যা খুব কমই আছে। চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করা এক অসহ্য যন্ত্রণা দায়ক জিনিস হল ব্রন ও ব্রনের দাগ। ব্রণের কুৎসিত দাগের কারণে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে ইচ্ছে করে না অনেক সময়। 

আর এই অসহ্য ব্রন ও ব্রনের দাগ হতে সহজে খুব দ্রুত মুক্তি দিতে অ্যালোভেরা খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। অ্যালোভেরার মধ্যে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে যেটা এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিসে ভরপুর থাকায় এটি ত্বকের ব্রন ও ব্রনের দাগ দূর করে ত্বককে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ থেকে মুক্ত রাখে । 

৩। ময়েশ্চারাইজারঃ

ময়েশ্চারাইজার মানে হচ্ছে ত্বকের বাইরের আবরণের ওপর একটি রক্ষাকারী আবরণ তৈরি করা যা ত্বককে নরম ও কোমল রাখে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের বাষ্পীভবন হ্রাস করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। 

অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা ময়েশ্চারাইজিং প্রপার্টি ত্বককে খুব ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজার করে ।

৪। আয়ুর্বেদিক ঔষধঃ 

বিভিন্ন অ্যালোভেরার মধ্যে রয়েছে আয়ুর্বেদিক ঔষধি গুনাগুন। এলোভেরাতে আছে দুটি হরমোন 

১. গিব্‌বেরেলিন ( Gibberellin ) ও

২.অক্সিন নামে পরিচিত।

অক্সিন ও গিব্‌বেরেলিন শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই উপাদানগুলো শরীরের জ্বালা ও জীবাণুর আক্রমণ হতে শরীরকে রক্ষা করে আরোগ্য দান করে।

৫। পক্ষতা বিরোধী প্রভাবঃ 

আমাদের প্রত্যেকের চেহারায় বলিরেখা ও নমনীয়তার অভাব দেখা দিলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। নিয়মিত অ্যালোভেরার ব্যবহারে অ্যালোভেরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বকের প্রাকৃতিক দৃঢ়তা ও উজ্জ্বলতা উন্নত করে এবং ত্বককে জলয়োজন (hydration)করে। 

আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ বৃদ্ধির জন্য দায়ী ফ্রিরেডিকেলস্। অ্যালোভেরাতে থাকা ভিটামিন এ , ভিটামিন সি যা ফ্রিরেডিকেলস্ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ত্বকে বলিরেখা আসতে দেয় না । এছাড়া এই উপাদানগুলো ত্বককে গভীর থেকে নমনীয় করে তোলে ত্বকের দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ত্বককে কোমল করে মনোহারী করে তোলে।

৬। ত্বকের জ্বালা হ্রাস করেঃ 

আমরা বিভিন্ন সময়ে ত্বকের মধ্যে জ্বালাভাব প্রদাহ যন্ত্রণা অনুভব করে থাকি। অনেকের হাত পায়ের তালুতে, অনেকের শরীরে , কারো কারো আবার মাথার তালুতে জ্বালা পোড়ার মত রোগ দেখা যায়। এই জ্বালাপোড়া বা প্রদাহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির সহজ উপায় হলো অ্যালোভেরার ব্যবহার। এলোভেরাতে রয়েছে স্যালিসাইলিক ( Salicylic ) অ্যাসিড ও চার স্টেরলস । 

১.কোলেস্টেরল 

২. কেমপেস্টেরল 

৩. লিওপিউল

৪. সিটসস্টেরল 

এই স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও ৪ স্টেরলস এ আছে প্রচুর পরিমাণে anti-inflammatory প্রপার্টি ( জ্বালা বিরোধী সম্পত্তি) যা শরীরের ও ত্বকের জ্বালা হ্রাস করে দেহ প্রশান্ত করে। 

৭। ব্যাথা নাশক ও জীবাণুনাশক ক্ষমতাঃ

ঋতু পরিবর্তন ও বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণের ফলে ত্বক বিভিন্ন জীবাণু রোগের সম্মুখীন হয়। ফলে আমরা নানা ধরনের ত্বক সমস্যায় ভুগে থাকি। কিন্তু  অ্যালোভেরার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড স্পোনিন, লিওপিউল এই তিনটি উপাদান বিষদভাবে প্রাকৃতিক ব্যাথা নাশক গুণসম্পন্ন ও জীবাণুনাশক ক্ষমতার অধিকারী । 

এছাড়াও এ উপাদানগুলো ত্বক হতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস , ফাঙ্গাস ও মাইক্রোবিয়া দূর করে ত্বককে রাখে সুস্থ সজীব ও প্রাণবন্ত।

৮। রোদে পোড়া হতে মুক্তিঃ

আমাদের ত্বককে আমরা সব সময় রৌদ্রের তাপ থেকে রক্ষা করতে পারিনা। ফলে ত্বক রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যায়। 

আর অ্যালোভেরার ব্যবহারে ত্বক রোদে পুড়ে তামাটে ভাব থেকে মুক্তি পায়। আর ত্বকে এটি সানবার্ন হিসেবে কাজ করে।

৯। আল্ট্রাভায়োলেট ও গামা রশ্মি হতে রক্ষাঃ

সূর্যের যে বিকিরণ পৃথিবীতে আসে তার মধ্যে আল্ট্রাভায়োলেট (  UV ray) ও গামা (Gamma) রশ্মি ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । এই রশ্মি ত্বকের ওপরে চরমভাবে প্রভাব ফেলে। এই রশ্মি ত্বকে বলিরেখা, চোখের নিচের কালো দাগ তৈরি, ত্বকের চামড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাজ ও বয়সের ছাপ সৃষ্টির জন্য দায়ী । আর এ সকল ক্ষতির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য অ্যালোভেরা খুব পারদর্শী। 

এলোভেরাতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ ভিটামিন এ ও সি যা ত্বকে বয়সের ছাপ সৃষ্টিকারী ফ্রি-রেডিকেল আসতে দেয় না এবং ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির ধ্বংসের (damage)হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ত্বকের ওপর রক্ষাকারী আবরণ তৈরি করে। 

১০। নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করেঃ

আমাদের ত্বকে প্রতিদিন হাজার হাজার কোষ মারা যায় ও নতুন করে কোষ জন্ম নেয় বা তৈরি হয় । মৃত কোষ ত্বক হতে তোলে না ফেলে বা সরিয়ে না নিলে নতুন কোষের জন্ম ও বৃদ্ধিতে সমস্যা দেখা দেয় । অ্যালোভেরা ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষ তৈরিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি ত্বকের কালো দাগ দূর করে। 

আপনারা তো ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা গুলো জানলেন। এবার থকে ত্বকের পরিচর্যায়  অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুণ।